অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Jhenaidah
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক ঝিনাইদহ জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
জেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নবগঙ্গা নদীর তীরে মুরারীদহ গ্রামে প্রাচীন জমিদারবাড়ি মিয়ার দালান। বাড়িটির প্রধান প্রবেশপথে এখনো কাব্যিক ভাষায় খোদাই করা আছে ‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহির হুরির বাখান, ইন্দের আরামপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ, এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান, কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১১২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালের সমাপ্ত দালান’। এ থেকেই জানা যায় নবগঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলা ১২৩৬ সালে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন ৭৫০০০ টাকা ব্যায়ে। ’৪৭-এর দেশ বিভাগের সময় এ বাড়িটি জমিদাররা স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে যান। সংরক্ষণের অভাবে বর্তমানে বাড়িটি ধ্বংসের পথে।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সদরের দুই কিলোমিটার পশ্চিমে নলডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরটির প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯ ফুট। এর ভেতরে একটি মূর্তি কোঠা ও একটি বারান্দা আছে। মন্দিরের সামনের দেয়াল পোড়ামাটির অলম্নকরণসমৃদ্ধ। ১৮৬৫ সালের কিছুকাল আগে নলডাঙ্গা জমিদার পরিবার কর্তৃক মন্দিরটি নির্মিত বলে জানা যায়। জেলা শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। প্রথমে বাসে কালীগঞ্জ হয়ে নলডাঙ্গা যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশা কিংবা ভ্যানে যাওয়া যাবে মন্দিরে।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপনা। ধারণা করা হয় বহুকাল আগে এখানে সমৃদ্ধ একটি শহরের অস্তিত্ব ছিল। এখানে এর বেশ কিছু সমৃদ্ধ স্থাপনা টিকে আছে এখনো। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গোরাই মসজিদ, গলাকাটা মসজিদ, জোড়বাংলা মসজিদ, সাতগাছিয়া মসজিদ, হাসিলবাগ গড় ইত্যাদি। ঝিনাইদহ থেকে বাসযোগে যেতে হবে বারবাজার। সেখান থেকে রিকশা বা ভ্যানে চড়ে ঘুরে দেখা যাবে জায়গাগুলো।
১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ মসজিদটির সংস্কার করে। প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া দেয়ালের এ মসজিদে পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশপথ আছে। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে দুই বড় ও দুটি ছোট প্রবেশপথ ছিল। বর্তমানে এগুলো জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে কালো পাথরের স্তম্ভ আর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মিহরাব। ভেতর এবং বাইরের দেয়াল পোড়ামাটির নকশা পরিপর্ণ।
১৯৯২-৯৩ সালে খননের ফলে বারবাজারের এ মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়। পাতলা ইটে নির্মিত এ মসজিদটি উঁচু একটি বেদির ওপরে নির্মিত। এ মসজিদের প্রধান প্রবেশপথটি উত্তর-পূর্ব কোণে। এখান থেকে একটি পাকা পথ মসজিদের পার্শ্ববর্তী দিঘির সিঁড়ি হয়ে তলদেশ পর্যন্ত চলে গেছে। মসজিদের পাশেই রয়ছে প্রাচীন আমলের বেশ কয়েকটি সমাধি। মসজিদের পাশের এ দিঘিটি অন্ধপুকুর নামে পরিচ
বারবাজার থেকে এ মদজিদের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এ মসজিদটি ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম স্থানীয় জনগন আবিষ্কার করে। এর ১০ বছর পরে ১৯৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর খনন করে। বর্তমানে মসজিদটির মূল ছাদ নেই। তবে এতে ৪৮টি স্তম্ভের ওপর ৩৫টি গম্ভুজ ছিল। বর্তমানে মসজিদটির পূর্ব, উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে ১৭টি প্রবেশপথ রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে আছে সাতটি মিহরাব।
বারবাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার। গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার নিয়ে নানান লোককাহিনী প্রচলিত আছে। এরকম একটি হল-বিরাট নগরের শাসক দরবেশ সিকান্দারের পুত্র গাজী। কালু ছিলেন সিকান্দারের পোষ্য পুত্র। কালু গাজীকে খুবই ভালবাসতেন এবং তাকে অনুসরণ করে চলতেন। গাজীর সঙ্গে ছাপাই নগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর সাক্ষাৎ হলে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে তারা প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। মুকুট রাজা গাজী ও চম্পাবতীর প্রেমে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সৈন্যদের হুকুম দেন গাজী ও কালুর কাছে পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহন করে গাজীর অনুসারী হয়ে যান। এদিকে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুকুট রাজা চম্পাবতীকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। সেখানেও চলে যান গাজী তার সঙ্গী কালুকে নিয়ে। অবশেষে অনেক যুদ্ধের পর মুকুট রাজার কাছ থেকে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারবাজার নিয়ে আসেন। কিন্তু শাহ সিকান্দার চম্পাবতীকে মেনে নিতে পারেন নি বলে সঙ্গী কালু ও দক্ষিণা রায়কে নিয়ে জঙ্গলে বেরিয়ে পড়েন।
এখানে গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার ছাড়াও দক্ষীণা রায়ের সমাধিও রয়েছে। গাজী-কালু ও চম্পাবতীকে নিয়ে নানান লোককাহিনীর মতোই এ অঞ্চলে তাদের নামে বিভিন্ন মাজারও রয়েছে।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে মল্লিকপুরে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি বটবৃক্ষ। এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটবৃক্ষ বলা হয় এটিকে। প্রায় ১১ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে এ গাছটি। এ জায়গাটির মালিক ছিলেন রায় গ্রামের নগেন সেনের স্ত্রী শৈলবালা সেন। পরবর্তী সময়ে এটি সরকারি খাসজমি হয়ে যায়। জেলা সদর থেকে বাসে কালীগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকে টেম্পো কিংবা রিকশায় মল্লিকপুরের বটবৃক্ষের স্থানে যাওয়া যায়।
হাসিলবাগ গড়
বারবাজারের হাসিলবাগ গ্রামে ভৈরব নদীর উত্তর তীরে প্রাচীন একটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ আছে। ধারণা করা হয় এটি একটি বড় আকারের মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এ জায়গাটি হাসিলবাগ গড় কিংবা জাহাজঘাটা নামে পরিচিত।