অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Kishoreganj
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক কিশোরগঞ্জ জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোট-এর জন্মস্থান হচ্ছে মিঠামইনের এ হাওড় এলাকা। তার নেতৃত্বে এ হাওড় এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। উন্নয়নের ধারবাহিকতার একটি অংশ হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানের সাথে এ হাওড় এলাকার যোগাযোগ সড়ক। এ সড়ক ও আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এ হাওড় এলাকার মানুষসহ সারা বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে।
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি গ্রামে অবস্থিত ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ| জনশ্রুতি আছে, এগারসিন্দুর যুদ্ধে মানসিংহের কাছে পরাজিত হবার পর লক্ষণ সিং হাজরার কাছ থেকে ঈশা খাঁ দূর্গটি দখল করেন| লক্ষ্ণণ সিংও দুর্গটির নির্মাতা নন|
দুর্গের বাইরে ও ভিতরে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে ধারণা করা হয় দুর্গটি প্রাক-মুসলিম আমলে তৈরি| তবে দুর্গের ভিতরের বেশ কিছু স্থাপনা ঈশা খাঁ নির্মিত| বর্তমানে জঙ্গলবাড়ির ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে ঈশা খাঁর বাসভবন| এর দরবার কক্ষটি টিকে থাকলেও ছাদ ধসে গেছে| দরবার সংলগ্ন পান্থশালার দশ-বারটি কক্ষ এখনো মোটামুটি অক্ষত| অন্দরমহলের একাংশে এখনো ঈশা খাঁর বংশধররা বাস করেন| জঙ্গলবাড়ি দুর্গকে একটি দ্বীপ মনে হয়| কারণ এটি চারপাশে জলরাশি দিয়ে ঘেরা| কিশোরগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় জঙ্গলবাড়ি গ্রামে যাওয়া যায়| দু্র্গে যেতে হয় নৌকা করে|
পাকুন্দিয়া উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এগারসিন্দুর গ্রামে অবস্থিত ঈশা খাঁর আরেকটি দুর্গ| জনশ্রুতি আছে, বেবুধ নামে এক কোচ উপজাতীয় প্রধান দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন| তাঁর কাছ থেকে ঈশা খাঁ দুর্গটি দখল করে নেন| ঈশা খাঁ একে সংস্কার করে তাঁর শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিনত করেন| ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুর্গটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় | ঢাকার মহাখালি থেকে পাকুন্দিয়া যায় জলসিঁড়ি ও অনন্যা পরিবহনের বাস| সেখান থেকে রিকশাতেই যাওয়া যায় এগারসিন্দুর|
হাওড় হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের বিশাল গামলা আকৃ্তির অবনমন| নদীর বাড়তি পানি ও বর্ষার বর্ষণে হাওড় পানিতে ভরে ওঠে| শুকনো মৌসুমে হাওড়ের বুকে চাষ হয়| আবার হাওরের মধ্যে থাকা স্থায়ী নিচু জলাভূমিকে বলে বিল| সংস্কৃত সাগর থেকে হাওর কথাটি এসেছে| সিলেট ও উত্তর-পূর্ব ময়মনসিংহের মানুষ স কেহ বলে এবং গ ধ্বনিকেও উচ্চারণ করে হ |
এভাবেই সাগর হয়ে গেছে হাওড়| ভরা বর্ষায় হাওড়ের রূপ মনোরম| আদিগন্ত জলরাশিকে তখন সাগরের মতই মনে হয়| এ জেলার উল্লেখযোগ্য হাওড় হল বাজিতপুরে হুমাইপুর হাওড়, অষ্টগ্রামে সোমাই হাওড়,মিঠামইনে বাড়ির হাওড়, নিকলী, বাজিতপুর ও মিঠামইনে তল্লার হাওড় এবং নিকলীর সুরমা বাউলা হাওড়| কিশোরগঞ্জ শহরের চামরাঘাটা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে এসব হাওড়ে যাওয়া যায়| হাওড়গুলো মাছসহ সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রে ভরপুর| এখানে শীতের সময় বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী পাখী আসে| হাওড় অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ|
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ শোলাকিয়া| ঈশা খাঁর বংশধর দেওয়ান হায়বত খাঁ এ ঈদগাহ স্থাপন করেন|জানা যায়, ইংরেজি ১৭৫০ সালে এখানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়| তখন থেকে নিয়মিত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মাঠে|জনশ্রুতি বলে, একসময় সোয়া লাখ লোক জামাতে অংশ নিতেন বলে এ ঈদগাহর নাম ‘সোয়ালাখিয়া’ এবং তা থেকে ক্রমে শোলাকিয়ায় পরিনত হয়| সময়ের প্রবাহে প্রচারমাধ্যমের ব্যাপক প্রচারের কারনে ঈদগাহটি এখন দেশব্যাপী সুপরিচিত| দেশের অন্যান্য স্থান থেকেও বহু মানুষ ঈদের নামাজ পড়তে আসেন এখানে| এখন মুসল্লির সংখ্যা হয় প্রায় তিন লাখ পর্যন্ত| ঈদ উপলক্ষে শোলাকিয়ায় দিনব্যাপী মেলাও বসে|
এগারসিন্দুর দুর্গের কাছেই এক গম্বুজবিশিষ্ট মুঘল আমলের এই মসজিদটি| বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৫ ফুট| প্রধান প্রবেশপথ ও কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃ্ত বড় এবং অলঙ্কৃত পোড়ামাটির ফলকে শোভিত| মূল নামাজ কক্ষের ওপরে পুরো অংশজুড়ে রয়েছে একমাত্র গম্বুজটি| গম্বুজের চূড়ায় আছে কলস ও পদ্ম| কেন্দ্রীয় মিহরাবে সংযুক্ত ফারসি ভাষার একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনকালে শাইখ শিরু নামে এক ব্যক্তির পুত্র সাদী ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে মসজিতটি নির্মান করেন|
সাদী মসজিদ থেকে মাত্র আধ কিলোমিটারের মতো দূরত্বেই এগারসিন্দুরের আরেকটি মুঘল আমলের স্থাপনা শাহ মাহমুদ মসজিত| এ মসজিতের সবগুলো মিহরাবই (ইমামের নামাজ পড়ার জায়গা) পোড়ামাটির অলঙ্করণে শোভিত| মসজিতটির একমাত্র গম্বুজটি বেশ বড়| নির্মাণশৈলী বিচার করে ঐতিহাসিকরা মসজিতটি ষোল শতকে নির্মিত বলে ধারণা করেন|
গুড়ইমসজিত
জেলার নিকলি থানা শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে এ প্রাচীন মসজিতটি| ইট নির্মিত মসজিতটি আকৃতিতে বর্গাকার| বেশ কয়েকবার সংস্কারের ফলে এর আসল রূপ হারিয়ে গেছে| মসজিতটি আনুমানিক ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বলে মনে করা হয়|