অষ্টমী স্নান নিয়ে হিন্দু পুরাণে একটি কাহিনী আছ। অতীতকালে জমদগ্নি মহা মুনির রেনু কানা মেরাজ বংশী সুন্দরী স্ত্রী ছিল। তাঁর ছিল পাঁচপুত্র। ঘটনাক্রমে মার্তিকাবর্ত দেশের রাজাকে সস্ত্রীক জল বিহার করতে দেখে আশ্র বাশিনী রেনুকার কামস্পৃহা জাগে। স্ত্রীর অন্যের প্রতি এ আসক্তি দেখে মুনিক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর পাঁচ ছেলেকে তাঁদের মাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু কোন ছেলেই মাতৃ হত্যার মতো জঘন্য কাজে রাজি হননা। তখন মুনি তাঁর প্রিয় ছেলে সবার ছোট পরশুরামকে নির্দেশ দেন। পরশুরাম কুঠারের আঘাতে মাকে হত্যা করেন। কিন্তু মাকে হত্যা করার পর পাপের শাস্তি হিসেবে কুঠারটি তাঁর হাতে আটকে থাকে। শত চেষ্টাতেও পরশুরা হাত থেকে কাঠার ছাড়াতে না পারলে পিতা তাঁকে কোন তীর্থ স্থানে গিয়ে পাপ মুক্ত হতে বলেন। তীর্থে তীর্থে ঘুরতে থাকেন অনুতপ্ত পরশুরাম। এক সময় তিনি জানতে পারেন ব্রহ্মপুত্রের জলে পাপ মুক্তি হয়। পরশুরাম হিমালয়ে লুক্কায়িত ব্রহ্মপুত্রের উৎস হ্রদটি খুঁজে বের করে তাতে ঝাঁপ দেওয়া মাত্রই তাঁর হাতে আটকে থাকা কুঠার খসে পড়ে।
ব্রহ্মপুত্রের এই অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন জলসব মানুষের উপকারে আনার জন্য পরশুরাম এ জলধারাকে সমতলভূমি তেনিয়ে আসার সঙ্কল্প করেন। তিনি খসে পড়া কুঠারটি লাঙ্গলের বেঁধে নালা সৃষ্টি করে ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জলধারাকে হিমালয় থেকে সমতল ভূমিতে নিয়ে আসেন। পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের এ স্থানটিতে এসে ক্লান্ত হয়ে লাঙ্গল চাষা বন্ধ করেন। এ কারনেই জায়গায়টির নাম হয়েছে লাঙ্গলবন্দ।
ব্রহ্মপুত্রের কাছে সুন্দরী শীতলক্ষ্যার রূপ-যৌবনের কথা পৌঁছলে শক্তিশালী ব্রহ্মপুত্র প্রচন্ড বেগে শীতলক্ষ্যার দিকে ধাবিত হয়। ব্রহ্মপুত্রের ভয়াল মূর্তি দেখে সুন্দরী শীতলক্ষ্যা তার সব সৌন্দর্য আড়াল করে নিজেকে বিগত যৌবনা বুড়িগঙ্গা রূপে উপস্থাপন করেন। ব্রহ্মপুত্র বুড়িগঙ্গা রূপী শীতলক্ষ্যার এই হতশ্রী চেহারা দেখে মর্মাহত হন।
কিন্তু রেগে গিয়ে বুড়িগঙ্গার অবগুণ্ঠন উন্মোচন করলে দেখেন শীতলক্ষ্যার প্রকৃত সৌন্দর্য। ব্রহ্মপুত্র শীতলক্ষ্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে মিলিত হন। দুজনের স্রোতধারা মিলিত হয়ে এক ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। এ দিকে পরশুরাম তীর্থ যাত্রা থেকে ফিরে এসে মানুষের উপকারের জন্য সমতলে নিয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র শীতলক্ষ্যায় মিলিত হয়েছে দেখে তাকে অভিশাপ দেন। তখন ব্রহ্মপুত্র পরশুরামকে তাঁর পাপ মোচনের কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি নরম হন।
তবে ব্রহ্মপুত্রের পাপ মোচনের অলৌকিক শক্তি কমিয়ে দিয়ে শুধু বছরের একটি দিনেই সে শক্তি অক্ষুণ্ন রাখেন পরশুরাম। আর সেদিনটিই হল চৈত্র মাসের অষ্টমীতিথি। বিভিন্ন সময়ে দানশীল মানুষ নদী তীরে বেশ কয়েকটি ঘাট নির্মান করে দেন। বতর্মানে প্রেমতলা ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, গান্ধী ঘাট, জয়কলী ঘাট, পাঠান কালী ঘাট, ভাতেরশ্বরী, শ্রীরামপুর ঘাট, কালী বাড়ী ঘাট, রাজ ঘাট, কালীদহ ঘাট, শঙ্কর ঘাট, শিকরী ঘাট ও রাখা কালী ঘাট নামে তেরটি শান বাঁধানো ঘাট আছে। কাছাকাছি আছে প্রায় দশটি মন্দির ও আশ্রম। অষ্টমী স্নানের সময় ছাড়া ও সারা বছরই কমবেশি হিন্দুপূণ্যার্থীরা এখানে আসেন। চৈত্র মাসের স্নানের সময় এখনে তিন-চার দিন ধরে মেলা বসে।