বঙ্গ অঞ্চল মুসলিম শাসনের অধীনে হওয়ার আগে পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ –পূর্ববঙ্গের প্রাশাসনিক কেন্দ্র। শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ চতুর্দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এ অঞ্চল দখল করে লখনৌতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলে সোনারগাঁওয়ে স্বাধীন হিন্দু রাজত্বের অবসান ঘটে। এরপর ১৩২২ সালে গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহের ক্ষমতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সোনারগাঁওয়ের গুরুত্ব কিছুটা কমে গেলেও এটি একটি বন্দর ও টাঁক শাল শহর হিসেবে পরিচিতি পায়।
১৩২৪ সালে গিয়াস উদ্দীন তুঘলক বাংলা অধিকার করে সোনারগাঁওকে পূর্ব বাংলার প্রাশাসনিক কেন্দ্রর মর্যাদা দেন। ১৩৩৮ থেকে ১৩৫২ সালে পর্যন্ত সোনারগাঁও ফখরউদ্দীন মোবারক শাহের স্বাধীন রাজ্য ছিল। ১৩৫২ সালে শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁও দখল করেন। আবার ঈশাখাঁ ও তাঁর বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও তাঁদের রাজধানী ছিল।
ঢাকায় মুঘল রাজধানী স্থাপনের পর থেকে সোনারগাঁওয়ের পতন শুরু হয়। সোনারগাঁও এলাকার প্রাচীন নিদর্শনগুলো আজো সুন্দরভাবে সাজানো আছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –পানামা নগর, খাস নগর দিঘি, দুলালপুরে রনীলকুঠি, গোয়ালদী শাহী মসজিদ, আমিনপুর মঠ, দামো দরদী মঠ, বড় সরদার বাড়ি প্রভৃতি। পানাম এলাকায় এখনো টিকে আছে মুঘল আমলে নির্মিত ইটের তৈরি পানাম সেতু, দুলালপুর পুল এবং পানাম নগর সেতু।
পানাম নগরে আছে ছোট ছোট লাল ইটের বেশ কিছু পুরোনো বাড়ি। এ গুলোর বেশির ভাগের অবস্থানই শোচনীয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগড়াপাড়া থেকে পানাম নগরের দিকে নীল কুঠি পর্যন্ত পাকা সড়কটি ও প্রাচীন নিদর্শন।
দুলালপুর সেতুর আগে এ পাকা সড়কের পূর্ব দিকেই পানাম নগরের অবস্থান। প্রায় পাঁচ মিটার প্রশস্থ এবং ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দু পাশে সুরম্য কিছু স্থাপনা নিয়ে পানাম নগর গড়ে উঠেছিল। সড়কের উত্তর পাশে ২১টি এবং দক্ষিণ পাশে ৩১টি মোট ৫২ টি পুরোনো বাড়ি এই ক্ষুদ্র নগরীর অন্যতম আকর্ষণ। পানাম নগরের চারপাশে কৃত্রিম খালদ্বারা সুরক্ষিত ছিল। পশ্চিম পাশের খালের সেতুটি পানাম নগরের প্রবেশ মুখ।