অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Satkhira
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক সাতক্ষীরা জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
সাতক্ষীরা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে মায়ের বাড়ি নামক জায়গায় পাঁচটি পুরোনো মন্দির আছে। এগুলোর প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। মন্দির পাঁচটি হল—কালীমাতা মন্দির, শিবমন্দির, কালভৈরব মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির এবং রাধাগোবিন্দ মন্দির। এগুলো আবার সাতক্ষীরা পঞ্চমন্দির নামে পরিচিত। অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এ মন্দিরগুলো সহজেই নজর কাড়ে সবার। সবগুলো মন্দিরের বিশেষ করে অন্নপূর্ণার বহিরাবরণ বিচিত্র পোড়ামাটির অলঙ্করণে আচ্ছাদিত। স্থানীয় জমিদার বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নিজের পরগনায় পূজা-অর্চনার জন্য আঠার শতকের গোড়ার দিকে এ মন্দিরগুলো নির্মাণ করেন। সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক ধরে রিকশায় গেলে ১৫ মিনিটে পৌঁছা যাবে মায়ের বাড়ি।
সাতক্ষীরা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে ছয়ঘরিয়ায় আছে জোড়া শিবমন্দির। নানান টেরাকোটাসমৃদ্ধ ইট নির্মিত এ মন্দির দুটি বংলা ১২২০ সালে ফকির চাঁদ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি নির্মাণ করেন। প্রায় ১৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট বর্গাকার এ মন্দির দুটি দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার কারণে এখন ধ্বংসের পথে।
জেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে খড়িবিলায় প্রায় ৪০ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত মোজাফফর গার্ডেন ও রিসোর্ট। বিশাল সবুজ চত্বরে এখানে আছে ৬টি বড় পুকুর, ২টি লেক, চিড়িয়াখানাসহ অবসর সময় কাটানোর মতো অনেক জায়গা। এখানকার রিসোর্টে অবকাশ যাপনের ব্যবস্থাও আছে।
জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এবং কলারোয়া উপজেলা থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে সোনাবাড়িয়া গ্রামে তিন তলাবিশিষ্ট প্রাচীন মন্দির শ্যামসুন্দর। এটি সোনা বাড়িয়া মঠ নামেও পরিচিত। মন্দিরের একটি নামফলক থেকে জানা যায়, ১৭৬৭ সালে হরিরাম দাস এটি নির্মাণ করেন। জেলা সদর থেকে যশোরগামী বাসে চড়ে যাওয়া যাবে জায়গাটিতে।
জেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ ও তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ নামে দুটি প্রাচীন মসজিদ আছে। এর মধ্যে তেতুলিয়া জামে মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত স্থাপনা। কলকাতার সিন্দুর পট্টি মসজিদের আমলে স্থানীয় জমিদার সালামতুল্লাহ খান মসজিদটি নির্মাণ করেন বাংলা ১২৭০ সালে। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদেম ২০টি সুদৃশ্য মিনার রয়েছে। জেলা সদর থেকে বাসে যাওয়া যায় জায়গাটিতে।
সাতক্ষীরা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে এবং কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাজপুর গ্রামে অপূর্ব টেরাকোটা সমৃদ্ধ ইট নির্মিত এ মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণকাল ১৬৯২ সাল জানা গেলেও এর নির্মাতা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা জেলার মোট আয়তনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়েই রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত সুন্দরবন। জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী ঘাট থেকে শুরু সুন্দরবনের। সুন্দরবনের অন্যান্য এলাকার থেকে এ জায়গাগুলোর ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য একটু ভিন্নতর। এ অঞ্চলের সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ জায়গাগুলো হল কলাগাছিয়া, মান্দারবাড়িয়া, দোবেকী ইত্যাদি। সুন্দরবনঘেঁষা মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতটি বেশ আকর্ষণীয়। এ ছাড়া সুন্দরবনের এ অঞ্চলটি মধু আহরণের জন্য বিখ্যাত।
সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলের বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জের তিন মাস ধরে চলে মধু সংগ্রহ। আর এ পেশায় নিয়োজিত তাদের বলা হয় মৌয়াল। প্রতি বছর মধু সংগ্রহের এ অভিযান শুরু হয় পহেলা এপ্রিল থেক। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মৌয়ালরা সুন্দরবনে যান মধু সংগ্রহ করতে। মধু সংগ্রহের এ যাত্রা শুরু হয় কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। যাত্রার শুরুতে একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রার্থনাশেষে প্রত্যেক মৌয়ালের হাতে বেঁধে দেয়া হয় লাল কাপড়। তাদের বিশ্বাস এ কাপড় বিপদআপদ বিশেষ করে বাঘের হাত থেকে রক্ষা করবে তাদের। এরপর মৌয়ালরা তাদের নৌকা নিয়ে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করেন। বন কর্মকর্তা আকাশে গুলি ছুড়লেই সবাই বৈঠায় হাত লাগান। ছুটে চলেন বনের উদ্দেশ্যে।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে মৌমাছিরা বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করে এবং বাইন, পশুর, গেওয়া, কাঁকড়া ও সুন্দরীসহ অন্যান্য গাছে মৌচাক তৈরি করে। বনে পৌঁছে এসব মৌচাকেই খুঁজে বেড়ান মৌয়ালরা। মধু সংগ্রহের দলে সাধারণত সাত থেকে তের জন মৌয়াল থাকেন। যাদের একজন নেতা থাকেন। নেতাকে মৌয়ালরা বহড়দাড় বলে। মধু সংগ্রহের স্থান নির্ধারণ করেন। নৌকায় একজনকে রেখে বাকি মৌয়ালদের নিয়ে দা, ধামা হাতে করে মধু সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে প্রবেশ করেন। আর এভাবেই মধু সংগ্রহের যাত্রা শুরু হয়।
বয়সে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ মৌয়ালরা বাতাসের গতি ও মৌমাছির উপস্থিতি ইত্যাদি লিক্ষ্য করে মৌচাকের অবস্থান খুঁজে বের করেন। যদি চার মিটার উচ্চতায় মৌমাছি উড়তে বা গাছের পাতায় মৌমাছির মল দেখা যায় তা হলে বুঝতে হবে আশপাশেই মৌচাক রয়েছে।
কোনো এক মৌয়াল দলের সঙ্গে অভিযাত্রী হয়ে এ মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর এসব দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে সাহায্য নিতে হবে কোনো অভিজ্ঞ ভ্রমণ সংস্থার। বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস প্রতি বছর মধু সংগ্রহের বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকে। যে কেউ সেই প্যাকেজ ভ্রমণে গিয়ে দেখে আসতে পারেন সুন্দরবনের মৌয়ালদের জীবনযাপন ও মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। সাধারণত ৩১ মার্চ থেকে শুরু হয় এ ভ্রমণ। ঢাকা থেকে শীতাতাপনিয়ন্ত্রিত বাসে সাতক্ষীরা। সেখান থেকে বেঙ্গলের নিজস্ব ভ্রমণতরীতে চেপে পশ্চিম সুন্দরবনের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো আর মধু সংগ্রহ দেখা।
শহরের পলাশপোল এলাকার গুড়পুকুরের পাড়ে দীর্ঘকালের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা বসে। মূল মেলা ৩১ ভাদ্র হলেও আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে এর রেশ। সার্কাস, যাত্রাপালা, নাগরদোলাসহ লোকজ সব আয়োজনই থাকে এ মেলায়। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয় এ মেলায়।
মায়ি চম্পার দরগা
সাতক্ষীরা উপজেলা সদরের তিন কিলোমিটার উত্তরে লাবসা গ্রামে মায়ি চম্পার দরগা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের মতো এটিও গাজী-কালু ও চম্পাবতীর সমাধি হিসেবে পরিচিত। জনশ্রুতি আছে শেষ জীবনে চম্পাবতী তাঁর পরোপকার ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে মা চম্পা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জেলা সদর থেকে সাতক্ষীরা-যশোর সড়কে তিন কিলোমিটার দূরে জায়গাটিতে যাওয়া যায় রিকশা কিংবা অন্যান্য বাহনে।