দিনাজপুর শহর থেকে ২১ কিমি. দূরে কাহারোল থানা কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত কান্তজিউ মন্দির। অনেকের মতে কান্তনগরে স্থাপিত বলে এর নাম কান্তজিউ মন্দির। জনশ্রুতি আছে, শ্রীকৃষ্ণ এর বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য এ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। দিনাজপুর এর তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ রায় ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে পোড়ামাটির অলংকরণ সমৃদ্ধ এই মন্দিরটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে তাঁর জীবদ্দশায় এই মন্দির এর নির্মাণ কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। পরে ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে তারই পালকপুত্র রামনাথ মন্দিরের নির্মান কাজ শেষ করেন। এর পরে তিনি এই মন্দিরটি শ্রীকৃষ্ণ এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।
স্থাপত্যিক রীতী, গঠন বিন্যাস, শিল্পচাতুর্য মর্ন্দিরটির সামগ্রিক দৃশ্যকে এতই মাধুর্যমণ্ডিত করে তুলেছে যে এর চেয়ে সুন্দর, নয়ননাভিরাম মন্দির বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। শৈল্পিক বিশ্লেষণে প্রায় ৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট বাহুবিশিষ্ট প্রস্তর নির্মিত বর্গাকৃতি সমান্তরাল জায়গার উপর, এই মন্দির দণ্ডায়মান। সৌধ পরিকল্পনায় মন্দিরটি ৩ ধাপে নির্মিত। সামগ্রিক দৃষ্টিতে মন্দিরটি দেখতে সুবৃহৎ রথ এর মতো। ৩ তলা বিশিষ্ট এবং বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট এবং উচ্চতা ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় উপরের গম্বুজ ঘরের আকৃতি ধারণ করেছে। ভুমিকম্পে ভেঙ্গে যাওয়ার আগে গম্বুজের উপরে ৯ টি সূদৃশ্য চূড়া ছিল। বারান্দার সামনে রয়েছে ইটের তৈরি দুটি করে স্তম্ভ। এই স্তম্ভের সাহায্যে দেয়াল এর সঙ্গে প্রত্যেক পাশে সংযুক্ত রয়েছে তিনটি করে খোলা দরজা। দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশের দরজা দুটি বেশি লক্ষ করা যায়। এই দরজার পরে ভেতরে মূল কামরা, সেখানে আছে মোট ১৮ টি কক্ষ । বড় কামরাগুলোর চারদিকে আছে ছোট কামরা।
মন্দিরের বেদির নিচে এবং দেয়ালের গায়ে পোড়ামাটি খচিত লক্ষাধিক ছবি রয়েছে। পৌরাণিক চিত্রসংবলিত টেরাকোটা ছাড়াও মন্দিরের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মূর্তির টেরাকোটাও রয়েছে। এসব টেরাকোটার মধ্যে নারী-পুরুষ, দেবতা ও কিন্নর, গায়ক ও বাদক, যোদ্ধা ও শিকারি, গৃহিণী, নৌকার মাঝি, নৃত্যরত রমণী, পালকি বাহক, গাছপালা ফল ও ফুল, লতা-পাতা ইত্যাদির ছবি মূর্তমান। কান্তজিউ মন্দিরের পাশেই রয়েছে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এক চূড়াবিশিষ্ট একটি মন্দির, এটিও নির্মাণ করেন মহারাজা প্রাণনাথ। রাজা প্রাণনাথ এই মন্দির নির্মাণ করে এখানে কৃষ্ণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মূর্তি তিনি এনেছিলেন বৃন্দাবন থেকে। এই মন্দিরটির ছিল ১৬ পার্শ্ব সংবলিত সৌধ এবং ৪০ ফুট উচ্চতায়। কান্তজিউ মন্দিরের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর রাস পূর্ণিমায় এখানে বসে পক্ষকালব্যাপী মেলা।
দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন থেকে পীরগঞ্জের বাসে কান্তনগর নামতে হবে ভাড়া জন প্রতি ২০-২৫ টাকা। সেখানে নেমে ঢেপা নদী পার হয়ে একটু সামনেই মন্দিরটি। শীতের সময় নদী পায়ে হেঁটে পার হতে পারলেও বর্ষায় কিন্তু নৌকায় পার হতে হবে