অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description About Tourism or Parjatan Place of Netrakona
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুারিষ্ট বা পর্যটক নেত্রকোনা জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
জেলার দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি ইউনিয়নে অবস্থিত এই আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি । এখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় আদিবাসী নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবনযাপন নানান নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে । বলা হয়, এ এলাকার সংগ্রামী মানুষের বীরত্ব থেকে এলাকাটির নাম একসময় ছিল বীরশ্রী যা কালক্রমে বিরিশিরিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টঙ্ক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণের নির্মিত এ স্মৃতিসৌধ। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই স্বচ্ছতোয়া সোমাশ্বরী নদী । নদী পার হয়ে কিছু দূর এগুলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি । বর্ষা মৌসুমে সোমেশ্বরীর কূল উপচে গেলেও শীত মৌসুমে নদীটি পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। তখন দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত চর। পেছনে মেঘালয়ের মেঘ ছুঁয়ে থাকা পাহাড়ের সারি। শুধু অসাধারণ এ নদীটি দেখার জন্যই নেত্রকোনা যাওয়া যেতে পারে। এ নদীতে একসময় বিশাল শোল মাছ পাওয়া যেত।
প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে মণি মেলা নামে তিন দিনব্যাপী লোকজ মেলা বসে। নিজে জমিদার বংশের ছেলে হয়েও নিপীড়িত কৃষক – শ্রমিকের ভাগ্য উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করেন গণমানুষের এই নেতা ।
দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের রাজবাড়ি । জায়গাটা বিরিশিরি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সুসং দুর্গাপুরের একসময় অধিপতি সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদারবাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। তাঁদের বংশধররা এটি পুনর্নির্মাণ করেন। এ জমিদারবাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। বড় বাড়ি, মেজ বাড়ি , আবু বাড়ি ও দুই আনি বাড়ি। জানা যায়, কয়েকশ বছর আগে আসামের কামরূপ-কামাখ্যা থেকে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্রাহ্মন এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। এলাকাটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যাবার পরিকল্পনা করেন সোমেশ্বর পাঠক। একপর্যায়ে গারো রাজা বৈশ্যকে পরাজিত ও হত্যা করে রাজ্য দখল করে নেন তিনি। সে সময়ে সুসং রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ ছিল আদিবাসী , যাদের অধিকাংশই আবার গারো। জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় আগ পর্যন্ত প্রায় তিনশ বছর সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারি করেন ।
রানীখং থেকে বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে হাজং মাতা রাসমণির স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত টঙ্ক বিদ্রোহের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাসমণি। তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাসমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে স্মৃতিসৌধটি।
রাসমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনামাটির পাহাড়। এ পাথাড়ের মাটিতে গোলাপি, বেগুনি, নীলচে ইত্যাদি নানা রঙের মিশেল। এখান থেকে সিরামিক কারখানার জন্য চীনা মাটি সংগ্রহ করা হয়। মাটি খোঁড়ার ফলে পাহাড়ের পাশেই সৃষ্টি হয়েছে পুকুরের মতো ছোট ছোট কিন্তু বেশ গভীর জলাধার।
জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী ও কলমাকান্দায় কমবেশি ৫৬টি হাওর ও বিল আছে। শুকনো মৌসুমে হাওড়ে চাষাবাদ হলেও বর্ষায় পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। মোহনগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় বাবলিকোনা গিয়ে এখানকার ডিঙ্গিপোতা হাওড়ে প্রবেশ করা যায়। এখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে হাওড়ের বিভিন্ন গ্রামে যেতে পারেন। বর্ষাকালে হাওড়ের গ্রামগুলোএকেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। নেত্রকোনা থেকে ইঞ্জিন বোটে তিন ঘন্টায় যাওয়া যাবে হাওরের মাঝখানে ছোট্ট গাগলাজোড় বাজারে। সারাদিন এ বাজারে মেলে হাওরের নানান মাছের পসরা। গাগলাজোড় বাজারের কাছে ছোট্ট গ্রাম জালালপুরে আছে এ অঞ্চলের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব উকিল মুন্সির বসতভিটা। ঝড়ের মৌসুমে বা ভরা বর্ষায় সাঁতার জানা না জানা নির্বিশেষে নৌভ্রমনের সময় লাইফ জ্যাকেট রাখার কথা বিবেচনা করতে পারেন। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ঘোরার ক্ষেত্রে। আমাদের দেশের নৌপথে দুর্ঘটনার হার বেশ উঁচু হলেও এ ধরনের নিরাপত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যা উদ্বেগজনক।
এ অঞ্চলের বিখ্যাত একটি মিষ্টান্ন বালিশ মিষ্টি। নেত্রকোনা শহরে বহুদিন পুরোনো গয়ানাথের দোকানে পাওয়া যায় সুস্বাদু এ মিষ্টি। অনেকটা চমচমের মতো দেখতে এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। আকারে প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওপরের খাঁটি দুধের ক্ষীরের প্রলেপ এর স্বাদে যোগ করে এক ভিন্নমাত্রা।
কেন্দুয়া উপজেল সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে বেতাই নদীর তীরে বোয়াইলবাড়ি গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ১৪৯৮ সালে কামরূপের নীলাম্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কামরূপ দখল করে নেন। এরপর কিছু দিন তাঁর ছেলে নসরত শাহ কামরূপ শাসন করেন। কিন্তু শিগগিরই প্রতিপক্ষের আক্রমণে বিতাড়িত হয়ে কামরূপ থেকে পালিয়ে এসে বোয়াইলবাড়িতে আশ্রয় নেন। এই নসরত শাহ-ই দুর্গটি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। এরপর বাংলার বারোভুঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁ এ অঞ্চলে তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ও নেত্রকোনার বোয়াইলবাড়ি দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেন। তিনি জঙ্গলবাড়ি থেকে বোয়াইলবাড়ি পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য একটি পাকা সড়কও তৈরি করেন। সড়কটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। এ ইতিহাস দীর্ঘকাল মাটিচাপা পড়েছিল। ১৯৯১ থেকে ’৯৩ সাল পর্যন্ত খননের ফলে বোয়াইলবাড়ির বিভিন্ন প্রাচীন চিহ্ন উদ্ঘাটিত হয়। এখানে খনন করে পাওয়া গেছে দেয়াল ঘেরা দুর্গ, বেশ কয়েকটি ভবনের মূল ভিত্তি , শান বাঁধানো ঘাটসহ দুটি পুকুর, মসজিদ, কবরস্থান, টেরাকোটার নিদর্শন, বর্শা ও চীনামাটির তৈরি নানা জিনিস। প্রায় ৪৬ একর জায়গার ওপরে বোয়াইলবাড়ি দুর্গ একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তির মর্যাদা পেয়েছে। নেত্রকোনা সদর থেকে বাসে সহজের যাওয়া যায় বোয়াইলবাড়ি দুর্গে।
সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী
বিরিশিরি থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় যেতে হয় রানীখং গ্রাম। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত রানীখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে। অর্থাৎ কিনা শিগগিরই একশ বছর হতে চলেছে এর। এখানে ভ্রমণের সময়ের ভুলবেন না এটি একটি ধর্মীয় স্থান। কোনো বিধিনিষেধ নেই, তবে এর নির্জনতা ও পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করে এমন আচরণ করবেন না। ছবি তুলতে হলে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে নিন। তাদের হাসিমুখেই সম্মতি দেওয়ার কথা।