অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Tangail
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক টাংগাইল জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
ঢাকা থেকে ৯৫ এবং টাঙ্গাইল থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছেই আধুনিক অবকাশ কেন্দ্র যমুনা রিসোর্ট। প্রায় ১২০০ বিঘা জায়গা নিয়ে এখানে আছে সুসজ্জিত বনভোজন কেন্দ্র, থাকার জন্য বিভিন্ন কটেজ, সুইমিংপুল, রেস্তোরাঁ, বার, খেলার মাঠ ও সভাকক্ষ। আছে যমুনায় নৌভ্রমণের ব্যবস্থা। যমুনা রিসোর্টের ভেতরে আছে একটি বন্যপ্রাণী জাদুঘর। এ এলাকায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এমন প্রায় তিন হাজার প্রাণীর দেহ সংরক্ষিত আছে এ জাদুঘরে।
মধুপুর বনের প্রায় ২০,৮৪০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত মধুপুর জাতীয় উদ্যান। এ বনের মূল বৃক্ষ হলো শাল। স্থানীয় ভাষায় একে গজারি বলা হয়। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের রসুলপুর মাজার এলাকায় উদ্যানের প্রধান প্রবেশপথ। এখান থেকে অনুমতিসাপেক্ষে জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করতে হয়। একটু সামনে পঁচিশ মাইল নামক জায়গা থেকে ডানদিকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ অফিস ও রেস্ট হাউস।
এখান থেকেও মধুপুর জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করা যায়। টাঙ্গাইল সদর থেকে এর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। মধুপুরের গভীর জঙ্গলে অনেক আগে একসময় হাতি ও বাঘ পর্যন্ত থাকত। এখন যে বন আছে তা অতীতের কঙ্কাল মাত্র। তাও দুর্বৃত্ত ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশসহ নানা কারণে বিলীনের পথে। মধুপুর বনে এখনো হনুমান, পাখিসহ নানা ধরণের বন্যপ্রাণী টিকে আছে। এখানে বন বিভাগের অফিসের সামনে একটি ঘেরাও করা জায়গায় বেশ কিছু চিত্রল হরিণ আছে। এ বনের নিবিড় অংশে ঘুরে বেড়ালে নগরের যান্ত্রিকতা ও দূষণক্লিষ্ট মন মুহূর্তে ভালো হয়ে উঠবে।
ধনবাড়িতে অবস্থিত নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়ি এটি। প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো এ অট্টালিকাটি বর্তমানে একটি পর্যটন কেন্দর। এ প্যালেসে এখন যেসব আসবাবপত্র দেখা যাবে তার অনেকগুলোই সেই নবাবি আমলের। প্রাচীর ঘেরা নবাব প্যালেস এবং কাছারির প্রাচীন আদল বজায় রেখে একে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। ধনবাড়ি জমিদারবাড়ির নবাব প্যালেসে থাকার ব্যবস্থাও আছে। একেবারে জমিদারি আমলের মতো আলিশানভাবে সাজানো হয়েছে এখানকার আবাসিক ব্যবস্থা।
জমিদারবাড়ির কাছেই রয়েছে অনেক পুরোনো ধনবাড়ি মসজিদ। মুঘল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি মসজিদটি কারুকাজখচিত। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদে একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের ভেতরের পুরোটায় চীনামাটির টুকরা দিয়ে নকশা করা।
টাঙ্গাইল জেলার পোড়াবাড়ির চমচমকে বলা হয় মিষ্টির রাজা। যমুনার শাখা ধলেশ্বরী তীরের গ্রাম পোড়াবাড়িতে এ মিষ্টি তৈরি শুরু হয় প্রথম । এখানকার নদীর পানি নাকি সেই মিষ্টির স্বাদে একটা আলাদা বিশেষত্ব যোগ করত। প্রায় দেড়শ বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার জনৈক রাজা রাম গোরার হাতে জন্ম হয় সুস্বাদু এ চমচমের। তাঁর পৌত্র মতিলাল গোরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর আজকের রূপ দেন। চমচমের বাইরের দিকটা দেখতে পোড়া ইটের মতো লালচে। দুধ, চিনি, পানি, ময়দা ও এলাচ এর মূল উপাদান। চমচমের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া শুকনো দুধের তৈরি এক ধরনের গুঁড়া এর স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়। টাঙ্গাইল শহরের হালুইপট্টি বা মিষ্টিপট্টিতে পাওয়া যাবে সেরা চমচম, রসমালাই (স্থানীয় নাম ছানার পায়েস), অমৃতি ও দইসহ অন্যান্য লোভনীয় মিষ্টান্ন।
টাঙ্গাইলের দুটি বিখ্যাত জিনিসের নাম বললে তা হবে মিষ্টি ও শাড়ি। টাঙ্গাইল শাড়ির খ্যাতি দেশজুড়ে। এমনকি ভারতেও এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। পাড় ও জমিন উভয়েই নানা কারুকাজ টাঙ্গাইল শাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নকশি বুটি বলে এক ধরনের শাড়ি এ অঞ্চলের তাঁতশিল্পীদের নিজস্ব সৃষ্টি। জেলার সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও সখীপুরের সর্বত্রই তাঁতের শাড়ি তৈরি হয়। সদর উপজেলার বাজিতপুর, ঘারিন্দা, গোঁসাইজোয়াইর, নলুয়া, এনায়েতপুর,বেলতা, কাগমারী প্রভৃতি গ্রামে প্রচুর তাঁত আছে।
হেমনগর জমিদার বাড়ীর অবস্থান টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার হেমনগর স্থানে। অষ্টাদশ শতাব্দীর কারুকাজ করা দুতলা ভবনটির মাধ্যমে পুরনো ঐতিহ্য কিছুটা প্রকাশ করছে। বাড়ির সামনে আছে বড় মাঠ। মাঠ পেরোলেই দেখা যাবে দ্বিতল বাড়ির ছাদে দুটি পরীর ভাস্কর্য। এ ভবনটি হচ্ছে ১০০ কক্ষের ও বাড়িটি হচ্ছে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর। বাড়ির সামনে দরবার জমিদার বাড়িটির মাঠের সামনে এবং বাড়ির পেছনে আছে বড় বড় দুইটি পুকুর। জমিদার বাড়িটির প্রতিটি স্থানে অলংকৃত করা আছে।
পাকুল্লা মসজিদ
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পালপাড়ায় অবস্থিত মুঘল আমলে (সম্ভাব্য) নির্মিত তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদ। ঢাকা থেকে উত্তরমুখো হয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যেতে থাকলে টাঙ্গাইল সদরের আগে পড়বে মির্জাপুর। এই মির্জাপুর সদর ছাড়িয়ে উত্তরে কিছুদূর গেলেই পাকুল্লা বাজারের পশ্চিমে মসজিদটি। কোনো ফলক না থাকায় এর সঠিক নির্মাণের সময় জানা যায় না। তবে স্থাপত্যরীতির বিচারে মসজিদটির নির্মাণকাল আঠার শতক বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।
পাকুল্লা মঠ
হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপত্যরীতিতে তৈরি পাকুল্লার মঠ নির্মিত হয়েছিল প্রায় দেড়শ বছর আগে। জানা যায়, পুণ্য চৌধুরী নামে ধনাঢ্য ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেছিলেন। শিব চতুর্দশীতে কালীপূজা ও মেলা বসে এখানে।
সন্তোষ জমিদারবাড়ি
করটিয়া থেকে টাঙ্গাইল শহর হয়ে মাত্র তিন কিলোমিটার পশ্চিমেই সন্তোষ জমিদারবাড়ি। চুন-সুরকিতে নির্মিত জমিদার মন্মথ রায়ের তৈরি ভবনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে। এ জমিদারবাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সন্তোষের জমিদাররাই বর্তমান ভারতের নামকরা সর্বভারতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট সন্তোষ ট্রফি চালু করেন।