অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description About Tourism or Parjatan Place of Coxs Bazar
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক কক্সবাজার জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
বিস্তীর্ণ বেলাভুমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ। সকালবেলা দিগন্ত জলরাশি ভেদ করে ওঠে রক্তবর্ণের থালার মতো সূর্য।অস্তের সময় দিগন্তের চারদিকে আরো বেশি স্বপ্নিল রঙ মেখে সে বিদায় জানায়। এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার।
প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ জায়গাটিতে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী বলা হয়। সড়কপথে ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নয়নাভিরাম এ সমুদ্রসৈকত। এখানকার সমুদ্রের পানিতে গোসল, সূর্যাস্তের মনোহারা দৃশ্য দেখেও ভালো লাগবে। কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে লাবণী পয়েন্ট থেকে। লাবণী বিচ ধরে হেঁটে হেঁটে পূর্বদিকে সোজা চলে যাওয়া যায় হিমছড়ির দিকে। যতোই সামনে এগুবেন ততোই সুন্দর এ সৈকত। সকাল বেলা বের হলে এ সৌন্দর্যের সঙ্গে বাড়তি পাওনা হবে নানা বয়সী জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
কক্সবাজার শহরের জাদি পাহাড়ের উপরে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির। শহরের যে কোনো জায়গা থেকেই রিকশায় আসা যায় এখানে। সান বাঁধানো সিঁড়ি ভেঙে জাদির পাহাড়ের উপরে উঠলে সাদা রঙের এসব বৌদ্ধ প্যাগোডা দেখে ভালো লাগবে। এই পাহাড়ের উপর থেকে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থান দেখতে পাওয়া যায়। শহরের আরেক জায়গায় রয়েছে অগ্বমেধ্যা কেয়াং নামে আরেকটি বৌদ্ধ প্যাগোডা। কাঠের তৈরি প্রাচীন এ বৌদ্ধমন্দিরটি নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়।
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এক সমুদ্রসৈকত, হিমছড়ি। এখানকার সৈকতের চেয়েও আকর্ষণীয় হল এর ভ্রমণ পথ। সৈকত লাগোয়া আকাশ ছোয়া পাহাড় এখানের অন্যতম আকর্ষণ। এ পাহাড়ে উঠলে চোখের সামনে ভাসবে নীল দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া বিশাল সমুদ্র। হিমছড়ির পাহাড়ের হিমশীতল ঝরনাও বেশ আকর্ষণীয়। কক্সবাজার সৈকত থেকে সব সময়ই খোলা জিপ ছাড়ে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। এ ছাড়া রিকশা ও ব্যাটারি চালিত রিকশা করেও যাওয়া যায় হিমছড়িতে।
হিমছড়ি ছাড়িয়ে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে আরেক আকর্ষণীয় সৈকত ইনানী। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার বেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। এখানে এলে মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সমুদ্রসৈকতের সঙ্গে। হিমছড়ি আর ইনানীর এ দুটি জায়গা দেখে আসা যায় একদিনেই। ব্যাটারি চালিত রিকশা, সিন জি, খোলা জিপ নিয়েও যেতে পারেন।
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এ জায়গাটি মূলত বিখ্যাত এখানকার আদিনাথ মন্দিরের জন্য। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি ভেঙে আদিনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই পাওয়া যাবে বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। এ দ্বীপের দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সাগর আর পশ্চিমে বিশাল বিশাল পাহাড়। এ ছাড়া এখানে আছে খুবই মনোরম একটি বৌদ্ধ মন্দির।
জেলেদের বিচিত্র জীবনাচরণও উপভোগ করা যাবে এখানে। মহেশখালীতে থাকার তেমন ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে সেটা কোনো সমস্যা না। কেননা কক্সবাজার থেকে সকালে গিয়ে এ দ্বীপটি ভালো করে দেখে আবার বিকেলের মধ্যেই ফেরা সম্ভব। কক্সবাজার ট্রলার ঘাট থেকে মহেশখালী যেতে পারেন স্পিডবোট অথবা ইঞ্জিনবোটে। স্পিডবোটে লাগবে ১৫ মিনিট আর ইঞ্জিনবোটে প্রায় ১ ঘণ্টা।
কক্সবাজারের বিপরীতে আরেকটি আকর্ষণীয় দ্বীপ সোনাদিয়া। শীতে প্রচুর অতিথি পাখির দেখা মেলে এখানে। প্রায় ৪৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটিতে কক্সবাজার থেকে গিয়ে আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব। আর যেতে হবে ইঞ্জিনবোটে।
কক্সবাজার জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান কুতুবদিয়া দ্বীপ। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপে দর্শনীয় স্থান হল প্রাচীন বাতিঘর, কালারমা মসজিদ এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। কক্সবাজারের কস্তুরী ঘাট থেকে ইঞ্জিনবোটে কিংবা স্পিডবোটে কুতুবদিয়া যাওয়া যায়। স্পিডবোটে সময় লাগে ৪৫ মিনিট ।
কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী একটি থানা রামু। এখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লামার পাড়ার বৌদ্ধ কেয়াং, রামকোট বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ কেয়াং। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে জিপে কিংবা মাইক্রোবাসে এখানে আসতে পারেন।
কক্সবাজারের শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশে রয়েছে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজরা বনাঞ্চলের ডুলাহাজরা ও হারগোজা ব্লকের প্রায় ৯০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে এ সাফারি পার্ক। তারপরেও জায়গাটি বেড়ানোর জন্য অনেক সুন্দর ও মনোরম। নানারকম প্রাণীর দেখা মিলবে এখানে। প্রতিদিন সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক।
এখানে নির্দিষ্ট প্রবেশের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা, স্কুল ছাত্রছাত্রী ৫ টাকা, শিক্ষা সফরের ৩০-১০০ জনের দলের জন্য ১০০ টাকা, ১০০ জনের উপরে দলের জন্য ২০০ টাকা, বিদেশী পর্যটিক ৫ ইউএস ডলার বা সমপরিমান টাকা, মিনিবাসে চড়ে বাঘ, সিংহ, হরিণ ও হাতির বেষ্টনীতে ভ্রমণ জনপ্রতি ২০ টাকা। কক্সবাজার থেকে চকোরিয়াগামী যে কোন বাসে চড়লে ডুলাহাজরা নামা যায়।
পাহাড়, নদী আর সমুদ্রের অনন্য এক মিলনস্থল বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূমি টেকনাফ। কক্সবাজার থেকে সড়কপথে এ জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে টেকনাফ আসা যায়। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়ে আন্তঃজিলা বাস টার্মিনাল থেকে আর মাইক্রোবাসগুলো শহরের কলাতলী এবং টেকনাফ বাইপাস মোড় থেকে ছাড়ে। থাকার জন্য পর্যটন মোটেল নেটং। এ ছাড়াও এখানে আছে সাধারণ মানের কয়েকটি হোটেল। পর্যটন করপোরেশনের নেটিং মোটেলটি কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে এবং টেকনাফ শহরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আগে।
নাফ নদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে পৃথক করেছে টেকনাফে। বাংলাদেশের সুন্দরতম নদীও বলা যায় একে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা এ নদী। প্রবাল্ল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যেতে হয় এ নদীর বুক চিরে। এখানে নাফ নদী থেকে নেটং পাহাড়ের সৌন্দর্য যেমন উপভোগ কার যায় আবার নেটং পাহাড় থেকেও চোখ মেলে দেখা যায় নাফ নদীর সৌন্দর্য।