অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Coxs Bazar
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক কক্সবাজার জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
টেকনাফ থানা এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। এ কূপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুলিশ অফিসার ধীরাজ ভট্টাচার্য ও চৌদ্দ বছর বয়সী মাথিনের প্রেমের অমর গাঁথা। গত শতকের শেষ দিকের কথা। টেকনাফ থানায় অফিসার হয়ে আসেন ধীরাজ ভট্টাচার্য। রাখাইন কন্যা মাথিন প্রায়ই জল নিতে আসত থানার সামনের কূপে। দু’জনের মধ্যে পরিচয় হয়।
সে পরিচয় একসময়ে রুপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। কিন্তু ধর্মের ভিন্নতা তাদের দু’জনের মিলনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ি থেকে দুঃসংবাদ পেয়ে কলকাতা ফিরে যায় পুলিশে অফিসার ধীরাজ। অনেক দিন চলে গেলেও ফিরে না আসায় মাথিন ক্ষোভে দুঃখে এই কূপে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। বহু বছরের পুরোনো এ কূপটি ধীরাজ-মাথিনের প্রেমের সাক্ষী হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা
টেকনাফ শহর ছাড়িয়ে কিছু দূর দক্ষিণে গেলেই সুন্দর সমুদ্রসৈকত। খুবই পরিচ্ছন্ন এ সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা খুব বেশি নয়। তবে এ সৈকতে জেলেদের মাছ ধরতে দেখা যায় সব সময়। টেকনাফ শহর থেকে রিজার্ভ কিংবা লোকাল জিপে সহজেই আসা যায় এ সৈকতে।
টেকনাফ উপজেলার সররাং ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত শাহপরীর স্বীপ একসময় এটি দ্বীপ থাকলেও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে কিছুকাল আগে এটি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা শহর থেকে শাহপরীর দ্বীপে যেতে জিপে সময় লাগে আধ ঘণ্টা।
টেকনাফ থানায় প্রায় ১১৬১৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত গেম রিজার্ভ। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে হোয়াইলিং বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলের শুরু। মূলত বন্যহাতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৩ সালে এ বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এ বনে রয়েছে প্রায় ২৯০ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ।
এ ছাড়া ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৩ প্রজাতির উভচর ও প্রায় ২৮৬ প্রজাতির পাখির বসবাস। তবে এ বনের মূল আকর্ষণ বন্য হাতি। বর্তমানে এ বনের অবস্থা ভালো নয়। অসাধু বনকর্মীদের সহায়তায় এ বনের গাছপালা এখন উজাড় হবার পথে। এ বনের আশেপাশে রাখাইন ও চাকমা আদিবাসীদের বসবাস। গেম রিজার্ভে তিনটি বিশেষ দ্রষ্টব্য এলাকা আছে।
প্রথমত, কুদুং গুহা টেইল। হোয়াইখিযং বাজার থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পশ্চিমে হরিখোলায় কুদুং গুহা ট্রেইল অবস্থিত। এ পথ ধরে দুই কিলোমিটার হেঁটে গেলে সামনে পড়বে বিশাল উঁচু পাহাড়। এই পাহাড়ের গায়ে বড় আকৃতির গুহাটিই কুদুং গুহা। এ গুহার ভেতরে গেলে বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড়ের কিচিরমিচির শোনা যায়।
দ্বিতীয়ত, তৈংগা পাহাড় ট্রেইল। প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় তৈংগা টেকনাফের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে একদিকে নাফ নদী আরেক দিকে দেখা মেলে বঙ্গোপসাগর।
তৃতীয়ত, টেকনাফ নেচার পার্ক। টেকনাফ শহর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার উত্তরে সমদমিয়া নামক জায়গায় টেকনাফ নেচার পার্ক। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাবার পথে এটি টেকনাফের নয় কিলোমিটার আগে পড়বে। এখানে তিনটি পায়ে হাঁটা পথে দেখা মিলবে জঙ্গল ভ্রমণের স্বাদ।
টেকনাফ থানা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে মনোরম দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ সৈকতজুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সমুদ্র তীরে সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রে আছে বড় বড় সামুদ্রিক কচ্ছপ। ডিম পাড়তে রাতের বেলা এরা দ্বীপে আসে। প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস এই দ্বীপে।
সেন্টমার্টিনের পুরো জায়গাটিই আকর্ষনীয়। এর একেকটি জায়গার বৈচিত্র্য একেক রকম। সেন্টমার্টিন ঘাটে নেমে যতোই সামনে এগুবেন ততোই এর বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন। পশ্চিম দ্বীপে গেলে একরকম আবার পূর্ব দ্বীপটা একেবারে অন্যরকম। একটু সামনের দিকে গেলে গলাচিপাটা আবার একেবারে অন্যরকম। মোটকথা পুরো দ্বীপটাই বৈচিত্রে ঠাঁসা।
সেন্টমার্টিনের একেবারে শেষপ্রান্তে রয়েছে ছেড়াদ্বীপ। একসময় এ জায়গাটি মূল দ্বীপ হতে বিচ্ছিন্ন থাকলেও বর্তমানে মূল দ্বীপের সঙ্গে প্রায় মিলে গেছে। তবে এখনো জোয়ারের সময় এ দুই দ্বীপের সংযোগস্থলে সমুদ্রজল বিচ্ছেদ রচনা করে। তাই ছেড়াদ্বীপে প্রবেশ করতে হবে ভাটার সময়ে। ছোট একটি কেয়াবন রয়েছে এখানে। বাকিটা শুধু প্রবাল আর প্রবাল। কোনো মানুষের বসবাস নেই ছোট্ট এই দ্বিপে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপ যাওয়ার জন্য ট্রলার রয়েছে। তবে এ দ্বীপের মূল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে এখানে হেঁটে যাওয়াই ভালো। পায়ে হেঁটে ছেড়াদ্বীপে যাওয়ার পথে দেখা যাবে কচ্ছ পপ্রজনন কেন্দ্র।
দ্বীপের পূর্ব সৈকত ধরে সকালবেলা হাঁটা শুরু করলে পুরো দ্বীপটি ধীর পায়ে ঘুরে আসা যাবে সন্ধ্যার মধ্যেই। এর মাঝে দুই তিন ঘণ্টা স্মরণীয় সময়ো কাটিয়ে নেয়া যাবে ছেড়াদ্বীপে। তবে এজন্য সঙ্গে অবশ্যই দুপুরের খাবার নিয়ে যেতে হবে। কেননা ছেড়াদ্বীপে তেমন কোনো খাবার কিনতে পাবেন না।
আজ থেকে ২৫ বছর আগে লেখক হুমায়ূন আহমেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে বিয়েছিলেন। সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি দেখে তিনি সেখানে ছোট্ট একটা ঘর বানালেন; নাম দিলেন সমুদ্র বিলাস। এখনো সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণসমুদ্র বিলাস ।
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের নীল সাগরের কোলঘেঁষে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সপ্নের বাড়ি সমুদ্র বিলাস্কে রূপ দেয়া হয়েছে আধুনিক ইকো রিসোর্টে। রিসোর্টের বারান্দায় বসে দুচোখ মেলে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য। রিসোর্টের সামনেই দীর্ঘ বেলাভূমি। সূর্যাস্তের দৃশ্যও দেখা যায় সমুদ্র বিলাসেই বসে। ভিন্ন আমেজে সাজানো হয়েছে সমুদ্র বিলাসের আয়োজন। রিসোর্টের ছয়টি কটেজের নাম হুমায়ুন আহমেদের ছয়টি জনপ্রিয় উপন্যাসের নামে। কটেজগুলো হল – ‘হিমুর মধ্য দুপুর’, ‘মিসির আলি আপনি কোথায়’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘আমার আছে জল’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ এবং কোথাও কেউ নেই’। সমুদ্র বিলাসের দোতলা রেস্তোরাটি নাম ‘শঙ্খনীল কারাগার’। নিচতলায় রয়েছে হুমায়ুন আহমেদ রচিত বই নিয়ে একটি পাঠাগার। দেয়ালে টাঙানো আছে বিভিন্ন সময়ে তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রের স্থিরচিত্র।
শিলখালী গর্জন বন
টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী মেরিনড্রাইভ সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে শিলখালী গর্জন বন। আকাশ ছোঁয়া বড় বড় গর্জন গাছ এ বনের মূল শোভা।
শাপলাপুর সৈকত
শিখখালী থেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক ধরে আরো ১০ কিলোমিটার গেলে শাপলাপুর সমুদ্রসৈকত। খুব সকাল কিংবা বিকালে এ সৈকতে ঝাঁকে ঝাঁকে নামে লাল কাঁকড়াদের দল। তা ছাড়া দীর্ঘ এ সৈকত বেশিরভাগ সময়ই থাকে প্রায় জনমানবহীন। ভ্রমণে যারা নির্জনতাকে পছন্দ করেন তাদের জন্য শাপ্লাপুর সৈকত আদর্শ জায়গা।