অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description About Tourism or Parjatan Place of Moulvibazar
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুারিষ্ট বা পর্যটক মৌলভীবাজার জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুল ভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছে যার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে।
শ্রীমঙ্গল শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে অবস্থিত সীতেশ বাবুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা চিড়িয়াখানাটি মুগ্ধ করার মতো। ছোট্ট এ চিড়িয়াখানাটিতে সোনালি বাঘ, সাদা বাঘ, মেছো বাঘ, অজগর, লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ, সোনালি কচ্ছপসহ নানা ধরনের বিরল প্রাণী রয়েছে।
দেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই বিশাল চা বাগানের মাঝে বিটিআরআই-এর ক্যাম্পাসটি সবারই ভালো লাগবে এখানে আছে চা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি, বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছ, ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, পুরোনো চা গাছ। তবে এসব দেখতে হলে কতৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই রয়েছে চা শ্রমিক রমেশের জাদুকরী চাষের দোকান নীলকণ্ঠ কেবিন। দুই রঙ থেকে শুরু করে পাঁচ রঙের চায়ের জন্য বিখ্যাত এ কেবিন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পর্যটকদের ভিড় লাগে এখানে। স্বাদে খুব একটা মজাদার না হলেও গোপন কক্ষে বসে তৈরি করা রমেশ বাবুর এ চা পরখ করে দেখতে পারেন।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছে ভাড়াউড়া লেক। পাশেই রাজঘাট চা বাগানের ভেতরে দৃষ্টিনন্দন আরেকটি লেক রয়েছে। এ লেক দুটিতে বর্ষায় প্রচুর পদ্ম ও শাপলা ফুটে থাকে।
হাইল হাওড় শ্রীমঙ্গল শহরের পশ্চিমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মৎস্যভাণ্ডারখ্যাত হাইল হাওড়। এ হাওড়ে সারা বছরই প্রচুর পাখির আনাগোনা থাকে। তবে শীতে অতিথি পাখির আগমন পাখির সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দেয়। হাইল হাওড়ের বাইক্কা বিলে রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। তিন দিকে পাহাড়বেষ্টিত এ হাওড়ের সৌন্দর্য মুগ্ধ হবার মতো।
কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই সীমান্তে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। বাংলাদেশ রাইফেলসের ধলাই সীমান্ত ফাঁড়ির পাশেই অবস্থিত এ সোধটি।
কমলগঞ্জের মাধবপুরে আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপূরিদের বসবাস। সংস্কৃতিমনা মণিপুরিদের বিভিন্ন উৎসবগুলোও বেশ আকর্ষণীয়। প্রতি বছর কার্তিকের পূর্ণিমায় মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় উৎসব মহারাস অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২৭০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া এ জলপ্রপাত সারা বছরই বহমান থাকে। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। মাধবকুঞ্জ ইকোপার্কের প্রধান ফটক ফেলে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হাঁটার পরে জলপ্রপাতে এসেই সড়কটি শেষ হয়েছে। জলপ্রপাতের কাছেই আছে একটি খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছোট্ট এ গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর।
মাধবকুণ্ড ঝরনার কিছুটা আগে শিবমন্দিরের বিপরীত দিক থেকে পাথুরে ঝিরি পথটি শেষ হয়েছে পরীকুণ্ড জলপ্রপাতে। এ ঝরনাটির সৌন্দর্য মাধবকুণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি। তবে এটি কেবল বর্ষাকালেই প্রাণ ফিরে পায়।
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছে বর্ষিজোড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এর আরেক নাম লাউডগা রিজার্ভ ফরেস্ট। প্রায় আটশ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বর্ষিজোড়া পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এ বনের প্রধান বৃক্ষ শাল।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশেই রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ উদ্যানে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, বিশ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি।
প্রধান সড়ক ফেলে কিছুদূর চলার পরে ঢাকা-সিলেট রেললাইন। এর পরেই মূলত জঙ্গলের শুরু। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হল উল্লুক, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর ইত্যাদি। উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি ট্রেকিং পথ আছে। একটি তিন ঘণ্টার, একটি দুই ঘণ্টার এবং অন্যটি এক ঘণ্টার পথ। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়া পল্লীও আছে। এ পল্লীর খাসিয়া তরুণ-তরুণীরা উদ্যানে আগত দর্শনাথীদের গাইডও করে থাকেন। প্রবেশপথে উদ্যানের কার্যালয় থেকে এরকম কোনো গাইড নিয়েই জঙ্গল ট্রেকিংয়েযাওয়া উচিত। নয়তো পথ হারানোর ভয় আছে।
দেশের অন্যতম বড় হাওড় হাকালুকি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে অবস্থিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পশ্চিম প্রান্তে পড়েছে হাকালুকির একটি অংশ। হাকালুকি হাওড়ের নামকরণ নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। জানা যায় বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজ ওমর মাণিক্যের সৈন্যদের ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জলমগ্ন এ জায়গায় লুকি
য়ে থাকে। এ কারণে এ এলাকার নাম হয় হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি। এরকম আরো একটি কাহিনী হল একসময় বড়লেখার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে এক আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। তাদের সে এলাকার নাম ছিল হেংকেলুকি। পরবর্তী হেংকেলুকি থেকেই হাকালুকি থেকেই হাকালুকির উদ্ভব হয়।
প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ হাওড়ের প্রায় ৭০ ভাগই মৌলভীবাজার জেলাতে। বর্ষায় এ হাওড় প্লাবিত হয়ে বিশাল রূপ ধারণ করে। তখন এর গভীরতা থাকে ৬-২০ ফুট। শুষ্ক মৌসমে হাওড়ের বেশিরভাগই শুকিয়ে যায়। শুধু হাওড়ের প্রায় ২৩৮টি বিলে সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে।