অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Khagrachari
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক খগড়াছড়ি জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নুনছড়িতে বিশাল উঁচু এক পাহাড়ের উপরে দেবতার পুকুর। এর আরেক নাম মাতাইপুখিরি। মহাসড়ক ছেড়ে পাহাড়ের ঢালে আঁকাবাঁকা পথে বেশ কিছুটা দুর্গম পথ পেরিয়ে পৌঁছুতে হবে দেবতার পাহাড়ের নিচে। ছোট্ট একটি ঝিরি পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠতে হবে উপরে। এখান থেকে উঠতে উঠতে ছবির মতো ধরা দিবে চারদিক। হাঁটতে হাঁটতে বিশাল উঁচু পাহাড়ের একেবারে চূড়াতেই এই জলাধার। দেবতার পুকুরের ইতিহাস পর্যটকদের শুনাতে তাঁর কোনো ক্লান্তি নেই।
শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মনোরম এক প্রাকৃতিক ঝরনা রিছং। আলুটিলা পাহাড়কে পিছু জেলে কিছুক্ষণ চলার পর মহাসড়ক ছেড়ে চলতে হবে ইট বিছানো পাহাড়ি পথে। চলতে চলতে একটা জায়গায় আর গাড়ি চলবে না। এখানে সড়ক আরো দুর্গম। পাহাড়ি পথ বেয়ে নিচে নামতে হবে বেশ কিছুটা পথ। হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে পাহাড় কেটে বানানো রিছং জলপ্রপাত। ঝিরঝিরি শব্দে পাহাড় বেয়ে বয়ে চলছে অবিরাম জলধারা। চারদিকে শুনশান নীরবতা। পাহাড়ি নিস্তব্ধতাকে উপেক্ষা করে বয়ে চলছে রিছংয়ের জলধারা।
শহর থেকে প্রায় আটকিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে আলুটিলা পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সর্পিল ধারায় বয়ে চলা চেঙ্গী নদীর অপরূপ সৌন্দর্যও দেখা যায় এখান থেকে। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায় খুব ভালোভাবে। আলুটিলা পাহাড়ের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হল এর প্রাচীন একটি গুহাপথ। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি ধাপের একটি সিঁড়ি নেমে গেছে গুহাপথের মুখে। গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা। ভেতরের পিনপতন নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বাদুড় আর চামচিকার কিচিরমিচির ওড়াউড়ি।
জেলার দীঘিনালা উপজেলা থেকেও প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে তৈদুছড়া এলাকায় ২০১০ সালে খুঁজে পাওয়া একটি মনোরম ঝরনা। চারদিকে সবুজ পাহাড়ের মাঝে শুকনো মৌসুমেও জলপ্রবাহ থাকে বিস্তর। বর্ষায় বেড়ে যায় আরো বেশি। খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড়ো ঝরনা এটি।
জেলা সদর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-মারিশ্যা সড়কের পাশে মরিশ্যা ভ্যালি। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সড়ক পেড়িয়ে মারিশ্যা ভ্যালিতে উঠলে চারদিকে শুধু সবুজে সবুজে ঢাকা পাহাড়। দীঘিনালা থেকে বাসে চড়ে আসা যায় চমৎকার এ জায়গাটিতে।
খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব সাজেক আসলে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। রাঙ্গামাটি থেকে এখানকার দূরত্ব অনেক বেশি। তাই সজেকের সঙ্গে সহজতম যোগাযোগ মূলত খাগড়াছড়ি থেকেই। খাগড়াছড়ি শহর ছেড়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে চলতে হবে। প্রথমে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আবার চলতে হবে। আর্মি ক্যাম্প ছেড়ে কিছুদূর এগুলে ছোট্ট একটি সেতুর নিচ দিয়েই বয়ে গেছে কাসালং নদী। একটু দূরেই দেখা যায় কাসালং এবং মাসালং নদীর সঙ্গমস্থল।
এখান থেকে সামনের পথ ক্রমশই দুর্গম; সৌন্দর্য যেন ততোই বেশি। বছর দুয়েক আগেও সাজেক যাওয়া ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। কোনো সড়ক ছিল না। কাসালং নদী ধরে কিছুটা নৌকা পথে আর পায়ে হেঁটে যেতে হত। নদী পথটাও আবার ছিল কেবল বর্ষায়। এখন সাজেক পর্যন্তই সড়ক হয়েছে। চলতে চলতে পড়বে মাসালং আর্মি ক্যাম্প। এখানে নাম লিখিয়ে আবার চলতে হবে। এখান থেকে সামান্য সামনেই মাসালং বাজার। এরপরে পাহাড়ের দুর্গমতা ক্রমশই বেশি। ঘণ্টাখানেক চলার পরে পৌঁছুতে হবে সাজেক ভ্যালির ওপরে। এখানেই আছে সাজেক বিডিআর ক্যাম্প। ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হবে সামনে।
পাহাড়ের গা বেয়ে মাটির রাস্তা ধরে উপরে উঠতে হবে। একটা জায়গায় এসে রাস্তা ফুরিয়ে যায়। সামনে যাওয়ার জো নেই। জিপ থেকে নেমে এবার খাড়া এক পাহাড়ে উঠতে হবে। এই পাহাড়ের ঠিক উপরেই আদিবাসীসের একটি গ্রাম। গ্রামের নাম কংলাক পাড়া। গ্রামের হেডম্যানের সঙ্গে দেখা করে গ্রামটি ঘুরে দেখা যেতে পারে। পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট এ গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বাড়ি। প্রায় বাড়িতেই সৌরবিদ্যুৎ আছে। অত্যন্ত সদালাপী ও আধুনিক চালচলন এ গ্রামের আদিবাসীদের। এদের বেশিরভাগই ত্রিপুরা। কিছু কিছু পাঙ্খোয়া আদিবাসীরাই থাকেন। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক আসতে হবে রিজার্ভ জিপে। খুব সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই সাজেক থেকে ফিরতে হবে। রাতে থাকার অনুমতি নেই। একটি জিপে ১২-১৫ জন যাওয়া যায়।
খাগড়াছড়ি ভ্রমণে গিয়ে সিস্টেম রেস্টুরেন্টে না খেলে ভ্রমণটা অপূর্ণরয়ে যাবে। রেস্তোরাঁটি শহরের একপ্রান্তে পাঙ্খোয়া পাড়ায়। মং লুসাই তার স্ত্রীকে নিয়ে এই রেস্তোরাঁটি পরিচালনা করেন। নানান পদের পাহাড়ি মেন্যু থাকে এ রেস্তোরাঁয়। ছোট্ট এ রেস্তোরাঁটির পেশাদারি আয়োজন মুগ্ধ করার মতো।