Description AboutTourism or Parjatan Place of Bagerhat 2
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুারিষ্ট বা পর্যটক বাগেরহাট জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ, এই নিয়ে আমাদের সুন্দরবন। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে এই সুন্দরবনের অবস্থান। দুশো বছর আগে মূল সুন্দরবনের বিস্তৃতি ছিল প্রায় ১৬৭০০ বর্গকিলোমিটার। সঙ্কুচিত হতে হতে বর্তমানে প্রকৃত আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০০০ বর্গকিলোমিটারে। ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পর সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পড়েছে বাংলাদেশে এবং বাকিটা ভারতে। এ হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশ প্রায় ৫৮০০ বর্গকিলোমিটার এবং ভারতের অংশে প্রায় ৪২০০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের অংশের মধ্যে প্রায় ৪১০০ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ ও ১৭০০ বর্গকিলোমিটার জলাভূমি। ‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ দুটি বিভাগের অধীনে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে সুন্দরবনকে। রেঞ্জগু্লো হল- চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা। ১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে প্রথম সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩২৪০০ হেক্টর এলাকা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। এক হিসেবে মতে সুন্দরবনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ত্রিশ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণের বসবাস। এ ছাড়া মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুইসাপ, ভোঁদড় ডলফিন, লোনাপানির কুমির, কিং কোবরা, বেঙ্গল কোবরা, অজগর ইত্যাদি বন্যপ্রাণীর দেখা মিলে সুন্দরবনে।
সুন্দরবনে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলাশী, বলা, হেতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।
লোকাল ও পরিযায়ী মিলে সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে বড় সাদা বক, সি ঈগল, বাজ, মাস্ক ফিস্কফুট, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙ্গা, ফিঙে, সুঁই চোরা, কাঠঠোকরা, বন মোরগ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া প্রায় চারশ রকম মাছ পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়।
শরণখোলা রেঞ্জের অধীনে সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কটকা। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে এ জায়গাটির সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এখানকার জামতলা সমুদ্রসৈকতটিও বেশ আকর্ষণীয়। জামতলা সৈকতে যাবার পথে এখানে আছে একটি চারতলাবিশিষ্ট জঙ্গল পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। আর কটকা টাইগার টিলার যাবার পথে আছে কাঠের তৈরি সেতুপথ। বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, বানর, লোনা জলের কুমির আর নানা নানান প্রজাতির পাখির দেখা মেলে কটকা অভয়ারণ্যের। কটকার খাড়িগুলো (সুন্দরবনের ছোট ছোট খাল) নৌকাযোগে ঘুরে দেখা যায় জোয়ারের সময়।
কচিখালী অভয়ারণ্যের পাশেই বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা সুন্দরবনের অংশ ছোট্ট একটি দ্বীপ। দূর থেকে দেখতে ডিম্বাকৃতির বলে এর নাম হয়েছে ডিমের চর। এখানে দেখা মেলে নানা রকম পাখির।
শরণখোলা রেঞ্জের আরেকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা তিনকোনা দ্বীপ। কুঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে তিনকোনা খালের এ দ্বীপটি নানান পাখি আর বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। এ জায়গাটির অল্প উজানেই কোকিলমণি।
চাঁদপাই রেঞ্জের উল্লেখযোগ্য একটি জায়গা দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মাঝে দুবলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। শীতে এখানে শত শত জেলেদের দল আসে মাছের শুঁটকি তৈরি করতে। প্রতি বছর পুণ্যস্নান রাস পূর্ণিমায়উপলক্ষে দুবলার চরে বসে রাস মেলা।
দক্ষিণ সুন্দরবনের এ জায়গাটি খুলনা রেঞ্জের অধীনে। কুঙ্গা নদীর পশ্চিমে তীরে অবস্থিত এর আরেক নাম নীলকমল। বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, বন্যশূকর, সরীসৃপ আর নানান প্রজাতির পাখি আছে এখানে। নীলকলম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কেওড়াশুঁটকির জঙ্গল পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে যাবার জন্য বন বিভাগের তৈরি কাঠের পথ আছে এখানে। রাতে হিরণ পয়েন্টে ভ্রমণতরীতে অবস্থান করলেই খালে শোনা যায় উড়ুক্কু মাছের কলকাকলি।
মংলার সবচেয়ে কাছে সুন্দরবনের অংশ করমজল। চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে জায়গাটিতে মংলা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে আধা ঘণ্টার মতো। এখানে আছে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র, বনে হাঁটার জন্য কাঠের তৈরি সেতুপথ ইত্যাদি। এ ছাড়া নানান বন্যপ্রাণীরও দেখা মেলে এখানে। দিনে দিনে ভ্রমণের জন্য করমজল আদর্শ জায়গা।
মংলা থেকে নদীপথে চাঁদপাই রেঞ্জের এ জায়গাটিতে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে হাড়বাড়িয়া ইকোপার্ক। নানান বন্যপ্রাণী আর পাখি ছাড়াও হাড়বাড়িয়ার অন্যতম আকর্ষণ মায়া হরিণ।
খুলনা রেঞ্জের উল্লেখযোগ্য একটি জায়গা সুন্দরবনের শিবসা। সুন্দরবনের নানান জীববৈচিত্র ছাড়াও এখানকার মূল আকর্ষণ প্রাচীন দুটি স্থপনার ধ্বংসাবেষ। ষোল শতকে তৈরি স্থপনা দুটি হল শেখেরটেক মন্দির ও বড়বাড়ি। সুন্দরবনের নলিয়ান রেঞ্জ কার্যালয় থেকেও প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে শিবসা নদের পূর্ব তীরে জায়গাটির অবস্থান।
সুন্দরবন থেকে দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে তিমি আর ডলফিনের এক রাজ্যের নাম সোয়াচ অন নো গ্রাউন্ড। সমুদ্র চলাচলে উপযোগী ট্রলার কিংবা জাহাজে গেলে জায়গাটিতে দেখা মিলবে ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিন। ভাগ্য সহায় হলে তিমিরও দেখা মিলতে পারে এখানে।
কয়েকটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার বদৌলতে সুন্দরবন ভ্রমণ এখন খুবই সহজ হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এখানে ভ্রমণে যাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। মংলা থেকে ছোট ছোট ইঞ্জিন বোটে এক দিনের ভ্রমণে গিয়ে ঘুরে আনা যায় করমজল ও এর আশপাশের এলাকা। তবে সুন্দরবনে দু-তিন দিন কিংবা তাঁর চেয়ে বেশি দিনের জন্য এবং সুন্দরবনের গভীরে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোতে যেতে চাইলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ও পেশাদার কোনো ভ্রমণ সংস্থার সাহায্য নিতে হবে।
হজরত খানজাহানের সমাধির পাশেই রয়েছে বিশাল এক দিঘি। এ দিঘিটি তাঁরই তৈরি। ১৮০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি বিশাল এ দিঘি দেখে আজো সবার মাঝে বিস্ময় জাগে কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল এত বিশাল এ জলাধারাটি। এটিকে সবাই জানেন ঠাকুর দিঘি নামে। এ দিঘি নিয়ে নানারকম কল্পকাহিনী শোনা যায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে।
ঠকুর দিল্লিতে এখনো রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল প্রজাতির মিঠাপানির কুমির। ৬০০ বছরের বংশপরম্পরায় চলে আসা শতবর্ষেরও বেশি বয়সের কুমির কালাপাহাড় আর ধলাপাহাড়ের মৃত্যু হয়েছে বছর দুয়েক আগে। বর্তমানে ভারত সরকারের উপহার দেয়া ছয়টি মিঠাপানির কুমির এ দিঘিতে রয়েছে। পুরো দিঘির চারপাশ জুড়ে রয়েছে হজরত খানজাহানের (র.) বিভিন্ন খাদেম তথা কর্মচারীসের বংশধরদের বসতভিটে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুল্কপক্ষে এখানে বার্ষিক ওরস ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ঠাকুর দিঘি
মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় লাউডুব যেতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। চাঁদপাই রেঞ্জের এ জায়গাটির এক পাশে সুন্দরবনের ঘন জঙ্গল আর খাল পেরিয়ে আরেক পাশে জনবসতি।
লাউডুব
ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রায় তিনশ গজ দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরঘোনা গ্রামের বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত প্রাচীন একটি স্থাপনা সিংড়া মসজিদ। বর্গাকারে নির্মিত এ মসজিদের প্রত্যেক বাহু বাইরের দিকে ৩৯ ফুট এবং ভেতরের দিকে ২৫ ফুট লম্বা। ইট নির্মিত মসজিদের প্রাচীরগুলো প্রায় ৭ ফুট প্রশস্ত। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে আছে তিনটি প্রবেশপথ। প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত মিহরাব। তবে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং সুসজ্জিত। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে প্রবেশপথ আছে। এ মসজিদটির নির্মাণকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এর নির্মাণশৈলী বিবেচনা করে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন সিংড়া মসজিদের নির্মাণকাল আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ মসজিদটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। ১৯৭৫ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত বিভাগ এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদটিকে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে সিংড়া মসজিদে নিয়মিত নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সিংড়া মসজিদ
ডিমের চরের পাশেই নতুন জেগে ওঠা একটি চর এটি। ছোট্ট এ দ্বীপে চরটি পাখির স্বর্গরাজ্য আর জেলেদের আস্তানা। বাঘের ভয় নেই বলে সুন্দরবনে মাছ ধরতে আসা জেলেদের অনেকেই রাতে নৌকা ভেড়ান পক্ষীর চরে।