অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন ও দেশ সম্পর্কে জানুন - পর্যটনবিডি.কম
Description AboutTourism or Parjatan Place of Chapainawabganj
এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুরিষ্ট বা পর্যটক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহীহয়ে উঠবে।
চাপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী। এককালের প্রমত্তা মহানন্দা এখন অনেকটা মরে গেলেও এর সৌন্দর্য এখনো মুগ্ধ করে। নদীর ওপরে শহরের কাছেই রয়েছে মহানন্দা সেতু। আমের সময়ে শহরের থানা ঘাটে প্রতিদিন সকালবেলা দূরদূরান্ত থেকে অনেক নৌকা ভিড় জমায়। খুব ভোরে শুরু হয়ে এ বাজার বেলা ওঠার কিছু পরেই শেষ হয়ে যায়। সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দিনে দিনে নৌকার সংখ্যা কমে আসছে এ বাজারে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পূর্ব দিকের সড়ক ধরে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আমবাগানের ভেতরে খনিয়াদিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত মসজিদটি। ইটের তৈরি এ মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট। প্রার্থনা কক্ষের ঠিক ওপরে বিশাল আকারের এ গম্বুজটির অবস্থান। মসজিদের মূল প্রার্থনা কক্ষের বাইরে একটি বারান্দা আছে। বারন্দা থেকে প্রার্থনা কক্ষে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মূল মিহরাবটি অন্য দুটি অপেক্ষা বড়। পুরো মসজিটি একসময় টেরাকোটা আচ্ছাদিত ছিল। ধ্বংস হতে হতে এখনো কিছু বিদ্যমান। খনিয়াদিঘি মসজিদের নির্মাণকাল সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে স্থপত্যিক রীতির বিচারে ঐতিহাসিকরা এটিকে পরবর্তী ইলিয়াসশাহী আমলে ১৪৮০ সালের দিকে নির্মিত বলে মনে করেন। মসজিদের পূর্ব দিকেই রয়েছে প্রাচীন আমলের খনিয়াদিঘি। এ কারণেই এর এরূপ নামকরণ। মসজিদটি ()জবিবি মসজিদ নামেও পরিচিত।
দরসবাড়ি মাদ্রাসা থেকে সামান্য পশ্চিমে বড় একটি পুকুরের ওপারে অবস্থিত দরসবাড়ি মসজিদ। কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এ মসজিদের শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দীন আবুল মুজাফফর ইউসুফ শাহ কর্তৃক নির্মিত হয় মসজিদটি এর বাইরের দিকের পরিমাপ দৈর্ঘ্য ৩৪ মিটার এবং প্রস্থ ২০.৬ মিটার। ভেতরের দিকের দৈর্ঘ্য ৩০.৩ এবং প্রস্থ ১১.৭ মিটার। মসজিদটির ছাদ বহু আগে ভেঙে পড়েছে। সামনের ভেঙে পড়া বারান্দার ধ্বংসাবশেষ এখনও বর্তমান। বাংলার মধ্যযুগীয় স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যসংবলিত এ মসজিদের দুটি অংশ, একটি সামনের বারান্দা এবং পশ্চিমে মূল প্রার্থনা কক্ষ। এর ছাদ বহু আগেই ধসে পড়েছে, ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে পাথরের স্তম্ভগুলো। কারুকার্যখচিত মসজিদের পশ্চিম দেয়ালের মিহরাবগুলো এখনো টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। দরসবাড়ি মসজিদে এখন নামাজ আদায় হয় না। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এটি একটি নামমাত্র সংরক্ষিত স্থাপনা।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সোনামসজিদের পশ্চিম পাশে, কিছুটা ভেতরের দিকে বিশাল একটি দিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত পাশাপাশি তিনটি প্রাচীন স্থাপনা। এর সর্ব দক্ষিণেরটি হল তাহখানা। ভবনটিতে বেশ কয়েকটি কক্ষ ছিল। ভবনটির লাগোয়া পূর্ব দিকের দিঘির ভেতর থেকে ভিত্তি পড়ে ভবনটির পূর্বাংশ তৈরি করা হয়েছিল। এর নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না। তবে জনশ্রুতি আছে সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজা ১৬৫৫ সালে ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন তাঁর বসবাসের জন্য। আবার কারো কারো মতে শাহ সুজা গৌড় অঞ্চলে বসবাস কারী তাঁর পীর শাহ নিয়ামত উল্লাহর জন্য এ ভবন নির্মাণ করেন
তাহখানা লাগোয়া উত্তর পাশের তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। মসজিদটির পূর্ব দিকে একটি খোলা আঙিনার চারপাশে আছে অনুচ্চ দেয়াল। পূর্ব দেয়ালের মধ্যভাগে রয়েছে তোরণ সহ প্রবেশপথ। মসজিদটির পূর্ব দেয়াল তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে প্রবেশপথ আছে। মসজিদটির নির্মাতা কে ছিলেন সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে জনশ্রুতি আছে সম্রাট শাহজাহান শাহ নিয়ামত উল্লাহকে বছরে পাঁচ হাজার টাকা আয়ের একটি সম্পতি দান করেন। তিনি ৩৩ বছর এ সম্পত্তি ভোগদখল করেন এবং এর আয় থেকে তার খানকার ব্যয় নির্বাহ করে উদ্বৃত্ত অংশ নিয়ে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
তাহখানা থেকে পূর্ব পাশে প্রধান সড়ক লাগোয়া অবস্থিত সুলতানি স্থপত্যের রত্ন হিসেবে খ্যাত ছোট সোনামসজিদ।কালো পাথরে নির্মিত এ মসজিদটির স্থপত্যিক বৈশিষ্ট্য খুবই আকর্ষণীয়। প্রধান প্রবেশপথের ওপরে স্থাপিত একটি শিলালিপি অনুযায়ী জনৈক মজলিস মনসুর ওয়ালী মোহাম্মদ বিন আলী কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়। শিলালিপি থেকে নির্মাণের তারিখসংবলিত অক্ষরগুলো মুছে যাওয়ায় মসজিদটি নির্মাণের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে এতে সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহের নাম থাকায় ধারণা করা হয় মসজিদটি তাঁর রাজত্বকালের (১৪৯৪-১৫১৯) কোনো এক সময় নির্মিত।
মসজিদটি মূল ভবনটি আয়তাকার। বাইরের দিকে উত্তর-দক্ষিণে ২৫.১ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫.৯ মিটার। পূর্ব দিকের সম্মুখভাগে পাঁচটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়াল তিনটি করে প্রবেশপথ আছে। পূর্ব দেয়ালের প্রবেশপথ বরাবর পশ্চম দেয়ালের অভ্যন্তরে পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব রয়েছে। মসজিদের পূর্বপাশে একটি পাথরের প্লাটফর্মের ওপরে দুটি সমাধি রয়েছে। এখানে কারা সমাহিত হয়েছেন তা সঠিক জানা যায় নি। তবে ঐতিহাসিক কানিংহামের মতে, সমাধি দুটি মসজিদের নির্মাতা ওয়ালী মোহাম্মদ ও তাঁর পিতা আলীর। মসজিদ প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দুটি আধুনিক সমাধি রয়েছে। যার একটিতে সমাহিত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর।
সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফেরার পথে পড়বে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার কানসাট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বাজারে চলে আমের বিকিকিনি। দূরদূরান্ত থেকে সাইকেল কিংবা রিকশা-ভ্যানে করে আম নিয়ে সকাল থেকেই এখানে জড়ো হতে থাকেন আমচাষিরা। বাজারটি ঘুরে দেখতে পারেন।
মহানন্দা সেতু পেরিয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কের দু পাশে যেদিকে চোখ যাবে শুধু আমবাগান। পছন্দের যে কোনো বাগানে নেমে ঘুরে দেখতে পারেন। সুন্দর একটি সময় কাটবে।
জেলার শিবগঞ্জের আদি চমচম বহুকালের বিখ্যাত। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের মালদহ জেলার অধীনে ছিল শিবগঞ্জ। সে সময়ে বেশ কিছু ময়রার বসবাস ছিল শিবগঞ্জে। দেশ বিভাগের পর তাদের বেশিরভাগ ভারতে চলে গেলেও যারা থেকে গেছেন, ধরে রেখেছেন আদি পেশা। শিবগঞ্জ উপজেলা শহরের এ আদি চমচম প্রতিটির আকার হয়ে থাকে ২০০ গ্রাম থেক দেড় কেজি পর্যন্ত। আর দাম কেজিপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় গান গম্ভীরা। নানা-নাতির ভূমিকায় দুজন শিল্পি গান, নাচ আর অবিনয়ের সমসাময়িক নানান সমস্যা তুলে ধরেন। নানা থাকেন লুঙ্গি পরা, মুখে পাকা দাড়ি, হাতে লাঠি। নাতির গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি, পরনে হাফপ্যান্ট। দুজনেরই মাথায় মাথাল আর কোমরে গামছা। শীত এবং আমের মৌসুমে সন্ধ্যার পর কোথাও কোথাও এখনো বসে গম্ভীরার আসর।
কোতোয়ালি দরওয়াজা
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে ছোট সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ভারতের প্রবেশ পথে অবস্থিত। নগর পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ কোতয়ালের অনুকরণে এর নামকরণ। এ নগর পুলিশ প্রাচীন গৌর নগরীর দক্ষিণে অংশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল বলে জানা যায়। প্রবেশপথের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের দেয়ালে ছিদ্র আছে। এগুলো দিয়ে শত্রুর ওপর গুয়লী কিংবা তীর ছোড়া হতো বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। কোতোয়ালি দরওয়াজাটি সাধারণভাবে কাছে গিয়ে দেখার উপায় নেই। সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দাঁড়িয়ে কেবল দূর থেকে দেখা সম্ভব। কারণ এটি ভারতের অংশ পড়েছে।
বুনিচক মসজিদ
খনিয়াদিঘি মসজিদের এককিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি মসজিদ। মসজিদটির উত্তর ও দক্ষিণের দেয়াল এবং ভেতরের পাথরের স্তম্ভ এখনো টিকে আছে। ছাদ এবং পূর্ব দেয়াল পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত। ইটের তৈরি এ মসজিদটি আয়তাকার। মসজিদের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে নির্মাণশৈলী বিবেচনায় এ মসজিদটিও পনের শতকের শেষের দিকে ইলিয়াসশাহী আমলে নির্মিত।
দরসবাড়ি মাদ্রাসা
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পশ্চিম পাশে অবস্থিত প্রাচীন একটি মাদ্রাসার ধ্বংসাবশেষ। চারপাশে প্রায় ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের বর্গাকৃতির এ স্থাপনাটিতে চল্লিশটি কক্ষ ছিল। ৪১.৫ মিটার আঙিনার চারপাশে ঘিরে ছিল ৩ মিটার দৈর্ঘ্যের বর্গাকৃতির এ কক্ষগুলো। একটি ঢিবির কাছে চাষ করার সময় কৃষকরা কয়েকটি ইট নির্মিত প্রাচীর ও শিলালিপির সন্ধান পান। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৭৪-৭৫ সালে পরীক্ষামূলক খনন করলে আবিষ্কৃত হয় মাদ্রাসাটির ভিত্তি। শিলালিপি থেকে জানা যায়, মাদ্রাসাটি সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ ১৫০৬ সালে নির্মাণ করেছিলেন। দরসবাড়ি অর্থ শিক্ষাকেন্দ্র। এই দরসবাড়িই কালক্রমে দারসবাড়ি নামে রূপান্তরিত হয়েছে।
শাহ নিয়ামিত উল্লাহর মাজার
মসজিদের লাগোয়া উত্তর দিকের ভবনটি শাহ নিয়ামত উল্লাহর মাজার। প্রায় তিন বিঘা জায়গাজুড়ে সমাধি এলাকার বেষ্টনী প্রাচীর। দক্ষিণ দেয়ালে আছে প্রবেশপথ। এখান থেকে পাকা পাকা পথ ধরে কিছুটা সামনেই সমাধিসৌধ। সৌধটির চারপাশে রয়েছে পাথর বাঁধানো বেশ কিছু কবর। দিল্লির করনৌল প্রদেশের অধিবাসী শাহ নিয়ামত উল্লাহ ছিলেন একজন সাধক পুরুষ। কথিত আছে ভ্রমণের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল ঝোঁক। ভ্রমণ করতে করতে একসময় তিনি এসে উপস্থিত হন গৌড় এলাকায়। শাহ সুজা তখন বাংলার সুবাদার। শাহ সুজা নিয়ামত উল্লাহর সাক্ষাতে মুগ্ধ হন। এরপর তিনি এ জায়গায় বসবাস শুরু করেন। ১৬৬৪ সালে এখানেই তিনি মারা যান। তবে তাঁর কবরের ওপরে সৌধটি কে নির্মাণ করেন সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না।
আদিবাসী জনগোষ্ঠী
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এদের মধ্যে সাঁওতাল, ওঁরাও, রাজোয়ার, রাজবংশী, বাগতি, মোহালি উল্লেখযোগ্য। সমভূমির এসব আদিবাসীর প্রধান প্রশা কৃষিকাজ।