এ পৃষ্ঠা থেকে ট্যুারিষ্ট বা পর্যটক ময়মনসিংহ জেলার ভ্রমন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। যা তাদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুধু তাই নয় এখনকার প্রতিটি ভ্রমন স্থানের নামের সাথে একটি তথ্যবহুলভিডিও-এর হাইপারলিংক করা আছেযার মাধ্যমে ভিডিও দেখে স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে ও ভ্রমণ সম্পর্কে তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে।
শশী লজ
ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি। মহারাজা শশীকান্ত ১৯০৫-১৯১১ সালের মধ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে তোলেন সুরমা এই প্রাসাদটি ।তখনকার মূল্যে প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল এটি নির্মাণে । ছোটবড় শতাধিক কক্ষ আছে এ প্রাসাদে । সব আসবাবপত্র ছিল চীনা সূত্রধরদের তৈরি যার কিছু এখনো বিদ্যমান । সে সময়ের আলোকসজ্জার সরঞ্জামাদিরও কিছু এখনো চোখে পড়ে বাড়িটিতে ।বাড়ির অভ্যন্তরে গোলাকার পুকুরটি ছিল মহিলাদের স্নানের জন্য । পুকুরের পাড়েই তাদের কাপড় বদলানোর ঘর।পুকুরের ঘাটলাটি মার্বেল পাথরের তৈরি। বর্তমানে শশী লজ প্রাসাদের অবস্থা জরাজীর্ণ । এ বাড়ির বাসিন্দারা অনেক জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে গেলেও এখনো বেশ কিছু পুরোনো দিনের নিদর্শন রয়ে গেছে। ১৯৫১ সাল থেকে এ বাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হিসেবে।
গৌরীপুর লজ
ময়মনসিংহ শহরের আরেকটি সুরমা স্থাপনা গৌরীপুর লজ। কাঠ এবং লোহার নির্মিত একটি অট্টালিকা এটি । বিশটিরও বেশি কক্ষ আছে এ বাড়িটিতে। ব্রজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি নির্মাণ করেছিলেন এ বাড়ি ।
আলেকজান্দ্রা ক্যাসল
ময়মনসিংহ জেলার প্রতিষ্ঠা ১৭৮৭ সালে। এ জেলার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ১৮৭৯ সালে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য এয়াটি ভবন গড়ে তোলেন । লোকমুখে এটি পরিচিত ছিল লোহার কুঠি নামে ।কেউ কেউ বলেন ,ভবনটিতে ব্রিটেনের রাজা এডওয়ার্ডের পত্নী আলেকজান্দ্রার চিত্র স্থাপন করা হয় বলে এর নাম হয় আলেকজান্দ্রা ক্যাসল ।অন্য একটি মতে মহারাজা সূর্যকান্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তৎকালীন ময়মনসিংহের জজ আ লেকজান্ডারের নাম স্মরণীয় করে রাখতে এ বাড়ির নাম দেন আলেকজান্ডার ক্যাসল । বর্তমানে এটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । জানা যায় এ বাড়িতে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির পদার্পণ হয়েছে। এঁদের মধ্যে ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,মহাত্না গান্ধী, লর্ড কার্জন ,দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ প্রমুখ ।
জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনের সবচেয়ে উজ্ঝল নাম গুলোর একটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন । ময়মনসিংহ শহরে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগ্রহশালাটি শিল্পীর প্রায় ৭০ টি শিল্পকর্ম নিয়ে এ সংগ্রহশালাটির যাত্রা হলেও ১৯৮২ সালে ১৭ টি চিত্রকর্ম চুরি হয়ে যায় । ১৯৯৪ সালে এর দশটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় । বর্তমানে এ সংগ্রহশালায় রয়েছে শিল্পাচার্যের ৫৩ টি শিল্পকর্ম ।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২০০ একর আয়তনের বিশাল ক্যাম্পাসটি বেশ দৃষ্টিনন্দন । ব্যাবহারিক শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত কৃষিজমি, খামার ইত্যাদির কারণেই এ ক্যাম্পাসের আয়তন এত বড় । ক্যাম্পাসের প্রবেশপথেই রয়েছে বিজয় ’৭১ নামে একটি ভাস্কর্য ।
নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত দুটি জায়গা কাজীর শিমলা দারোগা বাড়ি ও বিচ্যুতিয়া বেপারি বাড়ি । পিতৃহারা বালক নজরুলের মধ্যে প্রতিভার ইঙ্গিত দেখে তাকে পশ্চিম বঙ্গের আসান- সোল থেকে নিয়ে আসেন ত্রিশালের কাজীর শিমলার রফিজউল্লাহ। রফিজউল্লাহ্ আসানসোলে পুলিশের দারোগার চাকরী করতেন। আর অভাবের তাড়নায় বালক নজরুল লেখাপড়া ছেড়ে কাজ করেন চায়ের দোকানে । ১৯১৪ সালের শুরুর দিকে দারোগা রফিজউল্লাহ তাঁকে ত্রিশাল এনে দরিরামপুর হাইস্কুলে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। দারোগা বাড়িতে থেকে নজরুল পড়াশুনা চালিয়ে যান।
কাজীর শিমলা দারোগা বাড়ি পরবর্তী সময়ে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। দরিরামপুর স্কুলে পড়ার সময়ে নজরুল কিছু সময় জায়গির শিক্ষক ছিলেন বিচুতিয়া বেপারি বাড়িতে । প্রায় এক বছর তিনি ত্রিশালে ছিলেন । কবির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা থেকে সড়কপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে, ময়মনসিংহের ২০ কিলোমিটার আগে ত্রিশালের অবস্থান ।
মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি
ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগছা উপজেলায় অবস্থিত এ জমিদারবাড়ি । জানা যায় , জমিদার হরিরাম নির্মাণ করেছিলেন বাড়িটি । হরিরামের দুই পুত্র রমাকান্ত ও কৃষ্ণকান্ত অপুত্রক অবস্থায় মারা যান । কৃষ্ণকান্তের কাকা বিষ্ণুরামের নাতি ছিলেন গৌরি কিশোর । এই গৌরি কিশোরের ছিল দুই ছেলে , ভবানী কিশোর ও রাম কিশোর । রাম কিশোরের চার ছেলের মধ্যে জিতেন্দ্র কিশোর ও ভূপেন্দ্র কিশোর ছিলেন খুবই নাটক ও সঙ্গীতপ্রেমী । ভুপেন্দ্র কিশোরের উদ্যেগেই এ বাড়িতে উপমহাদেশের প্রথম ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলা ১৩৫২ সালে । এর নাম দেওয়া হয়েছিল রঙ্গপীঠ । রঙ্গপীঠের উত্তরপাশে কারুকারঝখচিত ঘরটি রাজরাজেশ্বরী পূজামণ্ডপ । তোরণ পেরিয়ে বড় একটি মাঠের পশ্চিমে পাশাপাশি
তিনটি প্রাসাদ । দক্ষিণের ভবনটির নাম শশীকান্ত প্রাসাদ যা বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ভবন হিসেবে । মাঝের ভবনটি আটআনি হিস্যাবাড়ি। এটি এখন পূরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত। সর্ব উত্তরের ভবনটি শ্রীধর হিস্যাবাড়ি যা ব্যবহৃত হচ্ছে আর্মড পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে। মুক্তাগাছা জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ছিলেন জগতকিশোর আচার্যের পৌত্র রাজা জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী । জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তাগাছার মিষ্টি মণ্ডার সুনাম দেশজোড়া । মুক্তাগাছার তারাটি গ্রামের গোপাল পাল নামে এক ময়রা ১৮২৪ সালে এখানে এ বিশেষ মিষ্টি তৈরি শুরু করেন ।তাঁর পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে এখনো মণ্ডা প্রস্তুত করেন । থানা শহরের গোপাল পালের দোকান থেকে কিনতে পারেন মণ্ডা । ময়মনসিংহ শহর থেকে বাস কিংবা টেম্পোতে মুক্তাগাছা যেতে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট।
গৌরীপুর জমিদারবাড়ি
ময়মনসিংহ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গৌরীপুরে অবস্তিত এ জমিদারবাড়িটি । বাড়িটি এখন ব্যবহৃত হয় উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তর হিসেবে । এ বাড়িটি সাবেক ময়মনসিংহ জমিদারির অন্যতম সদস্য শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর । জানা যায় , মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে ১৭১৭-১৭২৭ সালে তিনি এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন । ময়মনসিংহ শহর থেকে বাসে যেতে সময় লাগে ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ।
বীরাঙ্গনা সখিনার মাজার
গৌরীপুর উপজেলার সাত্তহা ইউনিয়নের কুমারী গ্রামে বীরাঙ্গনা সখিনার মাজার । কেল্লা তাজপুরের মুঘল শাসক উমর খাঁর কন্যা ছিলেন সখিনা । ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে তিনি অসি ও অশ্বচালনা শেখেন । সখিনা বড় হয়ে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁর প্রেমে পড়েন ।এতে উমর খাঁ ক্ষুদ্ধ হন। তখন ফিরোজ খাঁ কেল্লা তাজপুরের বিরুদ্ধে অভিযান চালান এবং উমর খাঁকে পরাজিত করে সখিনাকে লাভ করেন । কিন্তু পরে উমর খাঁ মুঘল শক্তির সাহায্য নিয়ে ফিরোজ খাঁকে বন্দি করেন। সখিনা স্বামীকে উদ্ধার করতে পুরুষের ছদ্ধবেশে নিজের বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন । সখিনা বাবাকে পরাজিতও করেন । ওদিকে ফিরোজ খাঁ শত্রুদের হাত থেকে জঙ্গলবাড়ি রক্ষার কথা চিন্তা করে সখিনাকে মিথ্যা তালাকনামা পাঠান । সখিনা প্রিয়তম স্বামীর পাঠানো তালাকনামা দেখে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণত্যাগ করেন। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
কুমিরের খামার জেলার ভালুকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় সতের কিলোমিটার দূরে হাতিবেড় গ্রামে আছে একটি কুমির প্রজনন কেন্দ্র । বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে পাঁচ হেক্টর জায়গায় গড়ে তুলেছে এ বাণিজ্যিক কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি । কয়েক বছর আগে ৭৫ টি কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল খামারটি । বর্তমানে এখানে কুমিরের সংখ্যা আরো অনেক বেশি । ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোন বাসে ভালুকা নেমে সেখান থেকে রিকশা কিংবা টেম্পোতে যাওয়া যায় এখানে ।
রামগোপাল জমিদারবাড়ি
ময়মনসিংহ – কিশোরগঞ্জ সড়কের রামগোপালপুর ষ্টেশনের কাছেই পুরানো জমিদারবাড়ি । প্রায় ২০০ বছর আগে গৌরীপুরের জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী এ বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন । জমিদারবাড়ির প্রবেশপথেই সুদৃশ্য সিংহতোরণ। ভেতরে ঢুকলে শুরুতেই চোখে পড়বে নাটমন্দির । বাড়িটির দক্ষিণ পাশের বিশাল দিঘিটি ‘ গঙ্গাসাগর’ নামে পরিচিত । বাড়ির ভেতরেও আছে ‘গোলদিঘি’ নামের জলাশয় যাতে স্নান করতেন নারীরা । এরপর আবার ছোট একটি তোরণ পেরিয়ে ভেতরে দোতলা প্রাসাদ । ময়মনসিংহ থেকে এখানে বাসে যাওয়া যায় ।
আব্দুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর
জেলার গফরগাঁও উপজেলার পচুয়া গ্রামে অবস্থিত ভাষাসৈনিক আব্দুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর । বায়ান্নর সেই উত্তাল ফেব্রুয়ারিতে ক্যান্সারে আক্রান্ত শাশুড়ির চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক ঢাকায় এসেছিলেন আব্দুল জব্বার । ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান তিনি । ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রজনতার বিশাল সমাবেশ হয় । মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের দাবিতে আব্দুল জব্বারও যোগ দেন সেই সমাবেশে । ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায় । এতে আরো কয়েকজনের সঙ্গে শহীদ হন আব্দুল জব্বার । তাঁর স্মৃতি অম্লান করে রাখতে পচুয়াতে নির্মাণ করা হয়েছে এ জাদুঘর ।
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
একাত্তরের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিসৌধ । শহরের কিছুটা বাইরে শম্ভুগঞ্জে বাংলাদেশ- চীন মৈত্রী সেতুর কাছেই জেলা প্রশাসনের নির্মিত এ স্মৃতিসৌধটি । স্মৃতিসৌধটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি রাইফ&